TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিকফিচার

অন্যায়ভাবে দেওয়া সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ডঃ আড়াই হাজার বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত

আড়াই হাজার বছর আগে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক সক্রেটিসকে। ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্সের আদালতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে হেমলক বিষপান করিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অভিযোগ ছিল— তিনি ধর্মকে অপমান করেছেন এবং তরুণদের বিপথে পরিচালিত করেছেন। কিন্তু সত্যের প্রতি তার অবিচল বিশ্বাস তাকে আপস করতে দেয়নি। মৃত্যুকে বরণ করেও অন্যায়ের সামনে মাথা নোয়াননি সক্রেটিস।

আধুনিক যুগে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ওনাসিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতীকী বিচারে পুনরায় খতিয়ে দেখা হয় সেই পুরোনো রায়। বিশ্বের খ্যাতনামা আইনবিদদের যুক্তিতর্ক শেষে আধুনিক আদালত ঘোষণা করে— সক্রেটিস ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ। এথেন্সবাসীর পক্ষ থেকে তাকে মরণোত্তর সম্মান জানানো হয়।

সক্রেটিস ছিলেন যুক্তির দার্শনিক, যিনি সত্য ও ন্যায়ের পথে কখনো আপস করেননি। নিজের দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাইতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। শিষ্যদের পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়ে দৃঢ়চিত্তে বলেছিলেন— “রাষ্ট্র যদি ভুলও করে, তবু আমি রাষ্ট্রের আইন ভাঙব না।” তার শান্ত মৃত্যু ছিল ন্যায়বোধের সর্বোচ্চ উদাহরণ, যা আজও নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে আলোচিত।

এথেন্সে জন্ম নেওয়া এই দার্শনিক ছিলেন রাজমিস্ত্রির পুত্র। শৈশব থেকেই রাজনীতি, সাহিত্য, সংগীত ও ক্রীড়ায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। একদিকে ছিলেন চিন্তাবিদ, অন্যদিকে সাহসী যোদ্ধা। পতিদা, দিলিয়াম ও অ্যাম্ফিপোলিসের যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দেন সক্রেটিস। তবুও গণতন্ত্রের বিরোধী ও ধর্মদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত হন তিনি। কারণ, তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে— দেবতা কি সবসময় ন্যায়ের পথে থাকেন?

সক্রেটিসের চিন্তার মূল ভিত্তি ছিল— জ্ঞানই পুণ্য, আর অজ্ঞতাই পাপ। তার মতে, কেউ জেনে-শুনে অন্যায় করতে পারে না; ভুল হয় শুধু অজ্ঞতার কারণে। সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধানেই তিনি সারাজীবন কাটিয়েছেন। তরুণদের বলতেন, “ধন-সম্পদের পেছনে নয়, আত্মার উৎকর্ষের পেছনে ছুটো।”

সক্রেটিসের মৃত্যুর সময়ও ছিল দার্শনিকতার এক অনন্য উদাহরণ। মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করে তিনি বলেছিলেন, “হয় মৃত্যু একটি স্বপ্নহীন চিরস্থায়ী ঘুম, নয়তো নতুন এক জীবনের শুরু।” তার কাছে মৃত্যু ছিল না ভয়, বরং নতুন জ্ঞানের দুয়ার।

সূত্রঃ দৈনিক প্রতিদিন

এম.কে

আরো পড়ুন

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে রুশ উলামা কাউন্সিলের ফতোয়া

এইআই ঝড়ে আইবিএমে গণছাঁটাই, চাকুরি হারালেন ৮,০০০ কর্মী

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে ‘পুরুষ’ হিসেবে অভিহিত, হলো মামলা