আশ্রয় আইনের জটিলতার সুযোগে যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে এক দণ্ডপ্রাপ্ত আলবেনীয় চোর, যাকে দুইবার জেল ও ফেরত পাঠানোর পরেও তৃতীয়বার আটকানো যাচ্ছে না। ২৮ বছর বয়সী ডোরিয়ান পুকা £৮০,০০০ দামের মার্সিডিজ গাড়িতে নিজের নামের কাস্টম নম্বর প্লেট লাগিয়ে টিকটকে ভিডিও প্রকাশ করে আইন ব্যবস্থাকে প্রকাশ্যে উপহাস করছে।
২০১৬ সালে প্রথমবার একটি বাড়িতে চুরির চেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ৯ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই সে আবার যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে লন্ডনে একাধিক চুরির ঘটনায় অংশ নেয়। পরবর্তীতে তিন বছর ছয় মাসের সাজা পেয়ে আবারও ২০২০ সালে ফেরত পাঠানো হয়।
কিন্তু সেই বছরের শেষেই সে আবার ইউরোপের অন্যান্য দেশের মাধ্যমে ব্রিটেনে প্রবেশ করে। এরপর সে একটি রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন জমা দেয় এবং বর্তমানে ইলেকট্রনিক ট্যাগসহ ইমিগ্রেশন বেইলে রয়েছে। আশ্রয় ট্রাইবুনালে আবেদন বিচারাধীন থাকায় আইনি বাধার কারণে তাকে এখনই ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না।
তবে আইনগত জটিলতার মাঝেই ডোরিয়ান পুকার বিলাসী জীবন চোখে পড়ার মতো। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে তাকে বহু দামী গাড়ি, রোলেক্স ঘড়ি ও বিলাসবহুল জীবনের নানা মুহূর্ত শেয়ার করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, সে পশ্চিম লন্ডনের হাউন্সলোতে £২,৫০,০০০ মূল্যের একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটে থাকছে।
বিরোধী দল এই পরিস্থিতিকে সরকারের ব্যর্থতা বলে আখ্যা দিয়েছে। ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেন, “লেবার সরকারের ব্রিটেনে এখন দণ্ডিত অপরাধীরা বিলাসী গাড়িতে ঘোরে, সামাজিক মাধ্যমে ঘড়ির ছবি পোস্ট করে, আর হোম অফিস শুধু বসে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “এই অপরাধী দুইবার বিতাড়িত হওয়ার পরও এখন আইনকে উপহাস করছে, আর আশ্রয় আবেদনের ছুতোয় নিজের অবস্থান বৈধ করছে। এটি একমাত্র কারণেই ঘটছে যে আমাদের বর্তমান আইনি কাঠামো অপরাধীদের পক্ষে কাজ করছে।”
এই সমস্যা সমাধানে কনজারভেটিভ সরকার একটি নতুন ‘ডিপোর্টেশন বিল’ প্রস্তাব করেছে, যেখানে অভিবাসন সীমা নির্ধারণ এবং মানবাধিকার আইন থেকে ছাড় দিয়ে বিদেশি অপরাধীদের সহজে বিতাড়নের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। সরকার জানায়, নতুন আইনের অধীনে ইতিমধ্যেই ৩০,০০০ অননুমোদিত অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন, “যেসব বিদেশি নাগরিক অপরাধ করে, তাদের ফেরত পাঠাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে যুক্তরাজ্যের আইনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আবেদন বিচারাধীন থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে ফেরত পাঠানো যায় না।”
তিনি জানান, “অভিবাসন আইন কার্যকর করতে এবং দেশে অবৈধভাবে থাকা মানুষদের ফেরত পাঠাতে আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়েছি, এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে।”
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
২০ জুলাই ২০২৫