TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

আইসিইউতে ‘জীবিত’ দেখালেও আইনগতভাবে মৃতঃ কী ব্রেন ডেথ এবং কেন এটি চূড়ান্ত মৃত্যু

আইসিইউর কাচের ওপাশে শুয়ে থাকা রোগীকে বাইরে থেকে দেখলে অনেক সময়ই জীবিত মনে হয়। শরীর উষ্ণ, বুক ওঠানামা করছে, মনিটরে হার্টবিট ভেসে উঠছে। কিন্তু চিকিৎসকেরা যখন বলেন ‘ব্রেন ডেথ’, তখন বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্রেন ডেথ মানে হলো—মস্তিষ্ক ও ব্রেনস্টেমের সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া, যা আর কোনোভাবেই ফিরে আসে না।

 

ব্রেন ডেথ অবস্থায় যন্ত্রের সহায়তায় শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন কিছু সময় চালু রাখা সম্ভব হলেও, মস্তিষ্ক আর শরীরকে কোনো নির্দেশ দিতে পারে না। তাই বাইরে থেকে ‘জীবিত’ মনে হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ওই ব্যক্তি আর বেঁচে নেই। একবার মস্তিষ্কের কোষ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা নতুন করে গড়ে ওঠে না—এটাই ব্রেন ডেথের মূল বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা।

চিকিৎসকদের মতে, ব্রেন ডেথের পেছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মারাত্মক মাথায় আঘাত, অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ব্রেন টিউমার এবং এনসেফালাইটিসের মতো গুরুতর সংক্রমণ। এসব ঘটনায় মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হয়।

ব্রেন ডেথ ঘোষণা কোনো তাড়াহুড়োর সিদ্ধান্ত নয়। সাধারণত অভিজ্ঞ নিউরোলজিস্ট নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক গাইডলাইন মেনে একাধিক ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। প্রতিটি ধাপ লিখিতভাবে নথিভুক্ত করা হয়। একবার ব্রেন ডেথ ঘোষণা হলে, আইন অনুযায়ী সেই সময়কেই মৃত্যুর সময় হিসেবে গণ্য করা হয়—হৃদযন্ত্র পরে বন্ধ হলেও।

ব্রেন ডেথ নিশ্চিত করার আগে চিকিৎসকেরা তিনটি বিষয় কঠোরভাবে যাচাই করেন। প্রথমত, আলো, শব্দ বা স্পর্শে রোগীর কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কি না। দ্বিতীয়ত, গলার গ্যাগ রিফ্লেক্স বা চোখে আলো ফেললে পিউপিলের নড়াচড়ার মতো স্বয়ংক্রিয় রিফ্লেক্স সম্পূর্ণ অনুপস্থিত কি না। তৃতীয়ত, ভেন্টিলেটর ছাড়া রোগী নিজে থেকে শ্বাস নেওয়ার কোনো চেষ্টা করতে পারে কি না।

এ ছাড়া বিভ্রান্তি এড়াতে আগে নিশ্চিত করা হয়—ওষুধের প্রভাব, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা রক্তচাপের সমস্যা যেন ভুলভাবে ব্রেন ডেথ বলে মনে না হয়। এরপর করা হয় শারীরিক পরীক্ষা, কোল্ড ক্যালোরিক টেস্টের মাধ্যমে কানে ঠান্ডা পানি ঢুকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা, অ্যাপনিয়া টেস্টের মাধ্যমে নিজে শ্বাস নেওয়ার সক্ষমতা যাচাই এবং প্রয়োজনে ইইজি বা ব্রেন ব্লাড ফ্লো স্টাডির মতো পরীক্ষা।

অনেকেই কোমা আর ব্রেন ডেথকে এক মনে করেন, কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে দুটো একেবারেই আলাদা। কোমায় থাকা রোগীর মস্তিষ্কে কিছু কার্যক্রম থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা জ্ঞানেও ফিরতে পারেন। কিন্তু ব্রেন ডেথ মানেই মস্তিষ্কের সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ—এটি আর কখনও ফিরে আসে না।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্রেন ডেথ মেনে নেওয়া যে কোনো পরিবারের জন্য মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন। যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চলতে থাকায় আশা তৈরি হয়, কিন্তু বৈজ্ঞানিক ও আইনি বাস্তবতা ভিন্ন। এই বাস্তবতাকে বোঝা ও গ্রহণ করাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সবচেয়ে কঠিন অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য।

সূত্রঃ ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক

এম.কে

আরো পড়ুন

সিলেট সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর অনুপ্রবেশের চেষ্টা, সাহসী অবস্থানে প্রতিরোধ গড়ল স্থানীয়রা

গতিসীমা ৩০ কিলোমিটারের প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধনের ডাক

নিউজ ডেস্ক

দলবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে আলটিমেটাম