যুক্তরাজ্যের এপিংয়ের বেল হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার বৈধতা নিয়ে আদালতের রায়ের পর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন হোটেলের ডজনখানেক বাসিন্দা। পরিকল্পনা আইন ভঙ্গের অভিযোগে মঙ্গলবার আদালত হোটেলটিকে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হোটেলটির সামনে ডানপন্থী উগ্রপন্থীদের সহিংস বিক্ষোভ চলছিল। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় এক আশ্রয়প্রার্থীকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত করার পর। এরপর থেকেই স্থানীয়দের আচরণে তীব্র পরিবর্তন দেখা গেছে।
২৪ বছর বয়সী সোমালি নাগরিক খাদর মোহাম্মদ জানান, বিক্ষোভের সময় তাদের কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। বাইরে বের হলে স্থানীয়দের কাছ থেকে গালাগাল ও কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের অপরাধী হিসেবে দেখা হচ্ছে। একজন যা করেছে, তার দায়ে সবাইকে দোষী মনে করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার একমাত্র অপরাধ অবৈধভাবে এখানে আসা। অন্য কোনো অপরাধ আমি করিনি। আমি কাজ করতে চাই, নিজের খরচ নিজে চালাতে চাই। বিনা খরচে খাবার বা বাসা নেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।”
হোটেলের বাইরে বিক্ষোভকারীদের রেখে যাওয়া পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও স্টিকার এখনও পড়ে আছে। স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ রায়ের পর আনন্দ প্রকাশ করেছে, আবার অনেকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে।
আরেক বাসিন্দা, ইরিত্রিয়ার ইয়োনাস (ছদ্মনাম), বলেন: “এখানে কোনো স্বাধীনতা নেই, এটা যেন জেলখানা। কাজ করার মতো দক্ষতা আছে, কিন্তু কাগজপত্র নেই।”
হোটেল কর্তৃপক্ষকে আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতের রায় মানতে হবে। ফলে শুধু এ হোটেলের বাসিন্দারাই নয়, বরং সারা দেশে হোটেলে থাকা প্রায় ৩০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর ভবিষ্যৎও ঝুলে গেল। ইতিমধ্যে বিভিন্ন কাউন্সিল একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হচ্ছে।
হোটেলে থাকা পরিবারগুলোও চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের সন্তানরা প্রতিবাদকারীদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে যায়। আমরা দেশ ছেড়েছি জীবনের নিরাপত্তার জন্য, এখন আবার কোথায় যেতে হবে জানি না। হোম অফিস যদি কাজের অনুমতি দিত, তাহলে আমরা নিজেরাই খরচ চালাতে পারতাম।”
একজন অভিবাসী বাসিন্দা জানান, বিক্ষোভকারীরা মাঝে মাঝে তাদের জানালার সামনে এসে ভিডিও করে। “এটা আমাদের জন্য ঘরের ভেতর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। কল্পনা করুন, কোনো ইংরেজ নাগরিকের বাড়ির সামনে যদি এমন হতো, তিনি কেমন অনুভব করতেন।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২১ আগস্ট ২০২৫