আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা শুরু করেছে পাকিস্তান। এর কয়েক ঘণ্টা পর সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে গুলি চালানোর দাবি করেছে তালেবান। স্থানীয় সময় সোমবার রাতভর আফগানিস্তানে পাকিস্তানের অভিযানের পর ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
হামলা প্রসঙ্গে ইসলামাবাদ বলেছে, সীমান্ত এলাকায় লুকিয়ে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে তালেবান জানিয়েছে, পাকিস্তানের হামলায় আট নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ সোমবার দাবি করেছে যে, সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের সামরিক অবস্থানগুলোতে গুলি চালিয়েছে তারা। ইসলামাবাদ এখনো এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
পাকিস্তানের সামরিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে, প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো করা হয়েছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালেবানের কমান্ডারদের আস্তানাগুলো লক্ষ্য করে। কারণ, ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপগুলো’ সীমান্তের ওপার থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
এর আগে গত শনিবার ভোরে আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের একটি সামরিক পোস্টে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হন। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে এই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল ছয়জন জঙ্গি। তবে হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম শুরুতে উল্লেখ করেনি ইসলামাবাদ।
এ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে যে, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান পাকতিকা এবং খোস্ত প্রদেশে সাধারণ মানুষের বাড়িতে হামলা করেছে। এতে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন—যার মধ্যে পাঁচজন নারী এবং তিনজন শিশু।
সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে জারি করা এক বিবৃতিতে আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন যে, পাকিস্তান যে ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করেছে সে পাকিস্তানেই বসবাস করছে। কাবুল পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে ‘বেপরোয়া’ বলে অভিহিত করে বলেছে যে, আফগানিস্তানের ভূখণ্ডের লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে কাবুল।
বিবৃতিতে আফগান সরকার বলেছে, ‘বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আফগানিস্তান কাউকে তার ভূখণ্ডে আগ্রাসনের অনুমতি দেয় না।’
দুই দিন আগে পাকিস্তানে চালানো আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে নবগঠিত জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই-ফুরসান-ই-মুহাম্মদ। জঙ্গি গোষ্ঠীটির নেতৃত্বে আছেন পাকিস্তানি তালেবান গোষ্ঠীর নেতা হাফিজ গুল বাহাদুর।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তার দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। গতকাল রোববার তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের বেশির ভাগই আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হচ্ছে।’
তবে এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করছে আফগান তালেবান।
সূত্রঃ আল জাজিরা
এম.কে
১৯ মার্চ ২০২৪