জরুরি সেবার ফোন রিসিভ করা কর্মীরা প্রতিদিন মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করলেও, সেই ফোনেই তারা বর্ণবাদী গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়ছেন। লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস (LAS) সম্প্রতি ১১১ ও ৯৯৯ নম্বরের কল হ্যান্ডলারদের বিরুদ্ধে আসা এমন ভয়াবহ নির্যাতনের একাধিক উদাহরণ প্রকাশ করেছে।
LAS-এর প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত এক বছরে ৯৯৯ কল হ্যান্ডলারদের ৫৪ শতাংশ এবং ১১১ নম্বরে কর্মরত ৪৮ শতাংশ কর্মী হুমকি, হয়রানি ও মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কন্ট্রোল রুমে কর্মরত প্রতি চারজনের একজনকে অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন আচরণের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
প্রকাশিত একটি ১১১ কল রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, এক কলার হ্যান্ডলারকে হুমকি দিয়ে বলেন, “আমাকে রাগাবেন না… আমি যদি সেখানে আসি, আপনাকে মেরে ফেলব।” এ ধরনের কল কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে LAS।
জরুরি কল সমন্বয়কারী জুড রডম্যান-কোল জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতেই তিনি অসংখ্য ঘৃণ্য গালিগালাজ শুনেছেন। তিনি বলেন, এক নারী কর্মীকে তার মায়ের মৃত্যুর বার্ষিকীর সময় বলা হয়, “আমি আশা করি তোমার বাবা-মা মারা যাবে।” নারী কল হ্যান্ডলারদের ‘বোকা’, ‘মূর্খ’ বলা হয় এবং যাদের উচ্চারণ ভিন্ন, তাদের ‘নিজের দেশে ফিরে যেতে’ বলা হয়।
তিনি আরও বলেন, ফোন কল যারা করেন তারা অনেক সময় জীবনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্তে ফোন করেন—এটা সেবাপ্রদানকারীরা বোঝেন এবং সে অনুযায়ী সহায়তা দিতে প্রশিক্ষিত। তবে বর্ণবাদ, হুমকি ও অপমান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব কারণে কর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও উদ্বেগজনিত অসুস্থতা বাড়ছে, যা পুরো লন্ডনের জরুরি সেবা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে।
দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের ক্রয়ডনে কর্মরত ১১১ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা লাইকাশিয়া ব্রাউন-ফ্লিন জানান, রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন নেই জানালে অনেক সময় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়।
তিনি বলেন, “আমরা শুধু মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। নিজের কাজ করার জন্য আমাদের অপমান সহ্য করা উচিত নয়। আমরা সবাই মানুষ, আর বর্তমান সমাজে বর্ণবাদের কোনো জায়গা নেই।”
এ পরিস্থিতিতে LAS ‘All we want for Christmas is… RESPECT’ শিরোনামে একটি নতুন সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করেছে। এর লক্ষ্য—ফোনে সাড়া দেওয়া জরুরি সেবা কর্মীদের প্রতি সম্মান দেখাতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা।
৯৯৯ অপারেশনের উপপরিচালক লরেন্স কাউডেরয় বলেন, কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নির্যাতন সহ্য করা হবে না। তিনি জানান, কল চলাকালে প্রশ্ন করা ও তথ্য যাচাই করা জরুরি—যাতে কলাররা দ্রুত ও সঠিক সহায়তা পায়। প্রতিটি অপমানজনক কল জীবনসংকটাপন্ন অন্য রোগীদের কাছ থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নেয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের নির্যাতন চললেও ২০২৪ সালে এতে পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। বর্তমানে LAS-এর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কর্মী নির্যাতনের শিকার। অনেকেই একাধিকবার, কেউ কেউ দশবারেরও বেশি এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।
LAS জানিয়েছে, তারা দেশের প্রথম অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস হিসেবে সহিংসতা হ্রাস ইউনিট গঠন করেছে, যাতে কর্মীরা নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে পারেন এবং পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সূত্রঃ দ্য মেট্রো
এম.কে

