6.3 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

আরও এক হত্যাচেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত হলেন ‘সিরিয়াল বেবি কিলার’ লুসি

যুক্তরাজ্যের সাবেক নার্স লুসি লেটবিকে আরও এক শিশুকে হত্যাচেষ্টার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হত্যাচেষ্টার শিকার ওই কন্যাশিশুটিকে ‘বেবি-কে’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার আদালতে লুসিকে দোষী সাব্যস্ত করার পর বেবি কে-এর পরিবার একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘আজ ন্যায়বিচার হয়েছে। কিন্তু এর মাধ্যমে চরম আঘাত, ক্রোধ এবং যন্ত্রণা দূর হবে না, যা আমরা সবাই অনুভব করেছি।’

গত আগস্টে লুসি লেটবিকে ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ইংল্যান্ডের কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে ৭টি শিশুকে হত্যা এবং আরও ৬ শিশুকে হত্যাচেষ্টার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন আদালত।

মঙ্গলবার রাতে বিবিসি জানিয়েছে, এবার বেবি-কে নাম উল্লেখিত কন্যা শিশুটিকে হত্যাচেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত হলেও বিচারকেরা এখনো এই মামলার রায় ঘোষণা করেননি। ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ওই অকাল-শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাসের নল বিচ্ছিন্ন করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন লুসি। এ ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতির শিকার ওই শিশুটিকে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি।

বেবি কে কীভাবে খুনী নার্সের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল তা বিস্তারিত পড়ে শোনান বিচারকদের ফোরম্যান। শিশু লুসি লেটবিকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয় তখন বেবি কে-এর বাবা-মা কেঁদে উঠেন। তবে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লুসির মধ্যে এ সময় কোনো আবেগ দেখা যায়নি।

শ্বাস-প্রশ্বাসের নল বিচ্ছিন্ন করে শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া দেখছিলেন লুসি। তবে হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রবি জয়রাম রাত পৌনে চারটার দিকে ওই ইউনিটে প্রবেশ করে শিশুটির পাশেই লুসিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। এ সময় শিশুটির অবস্থা খুব নাজুক হয়ে পড়লেও লুসিকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখেননি ওই চিকিৎসক।

এ বিষয়ে ছয় নারী ও ছয় পুরুষ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত ওই আদালতকে লুসি বলেছেন, এই ধরনের কোনো ঘটনার কথা তার মনে নেই। শিশুটিকে ক্ষতিকর কিছু করার কথাও তিনি অস্বীকার করেছেন। নিজেকে নির্দোষও দাবি করেন তিনি।

গত বছরের আগস্টে সাত শিশুকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। ৩৪ বছর বয়সী ওই নারী নার্স শিশুদের জোর করে অন্যের দুধ পান করানো ছাড়াও অন্তত দুই নবজাতকের শরীরে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন।

কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালে শিশুদের অকাল মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে দুই বছরের তদন্তের পর পুলিশ লুসিকে অভিযুক্ত করেছিল।

সিনিয়র ক্রাউন প্রসিকিউটর প্যাস্কেল জোনস বলেছিলেন, ‘নার্স (লুসি) তার অপরাধ গোপন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।’

লুসির এ ধরনের অপরাধের সম্ভাব্য কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছিলেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে এক চিকিৎসকের প্রতি তার দুর্বলতা ও গোপন সম্পর্কের কথাও প্রকাশ্যে এনেছিলেন তারা।

শুনানিতে আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, হাসপাতালটিতে কোনো শিশুর অবস্থা গুরুতর হলেই ওই চিকিৎসককে চিকিৎসার জন্য ডাকা হতো। তাই লুসি হয়তো শিশুদের উপর হামলা করে গুরুতর অসুস্থ বানিয়ে ওই চিকিৎসককে কাছে পেতে চাইতেন।

আদালতের নথিতে উল্লেখ আছে, লুসি এবং সেই চিকিৎসক হাসপাতালের বাইরেও বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলেন। তাদের মধ্যে হওয়া কথোপকথনগুলো ভালোবাসার ইমোজিতে ভরা। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন লুসি লেটবি।

আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, মানসিকভাবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলেন লুসি। শিশুদের ক্ষতি করে তিনি হয়তো নিজেকে সৃষ্টিকর্তার মতো শক্তিমান কিছু ভাবতেন। যা ঘটছিল তা থেকে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আর আঘাতের পর কী ঘটতে যাচ্ছে—তা অনুমান এবং মিলিয়ে দেখতেন তিনি।

জানা গেছে, লুসি লেটবিকে দুইবার গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে তৃতীয়বার গ্রেপ্তারের পর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হাসপাতালের কিছু কাগজপত্র ও হাতে লেখা একটি চিরকুটও পায় পুলিশ। চিরকুটে লেখা ছিল–‘আমি খুব খারাপ, আমি এটা করেছি।’

এ ছাড়াও লুসি লেটবির লেখা কিছু কাগজপত্রও সে সময় আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। একটি কাগজে লেখা ছিল, ‘আমি তাদের হত্যা করেছি; কারণ তাদের পরিচর্যার কাজে আমি অতটা ভালো নই।’

আরেকটি কাগজে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি কখনোই সন্তান নেব না, বিয়েও করব না। পরিবার কেমন, তা আমি কখনোই জানতে পারব না।’

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৩ জুলাই ২০২৪

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ পাসপোর্টে আসতে যাচ্ছে নতুন পরিবর্তন

উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৬০০ পাউন্ড এনার্জি বিল সাপোর্ট নিশ্চিত করলো সরকার

ইস্ট লন্ডনে বিল্ডিং হতে পড়ে এক কিশোরীর মৃত্যু