TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইংলিশ চ্যানেলে যাত্রা ঠেকাতে ফরাসি উপকূলে সাইনবোর্ড ঝোলাচ্ছে যুক্তরাজ্য

ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের যুক্তরাজ্যমুখী যাত্রা ঠেকাতে নতুন প্রচারাভিযানে নামছে যুক্তরাজ্য৷ চ্যানেলে ছোট নৌকা থামাতে উত্তর ফ্রান্সের উপকূলে সাইনবোর্ড ও পোস্টার ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য৷

এসব পোস্টারে লেখা থাকবে, ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় কোনো অভিবাসী যুক্তরাজ্য পৌঁছালে তাকে আবার ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে৷

ফ্রান্সের কালে ও ডানকের্কের আশেপাশের সৈকতগুলোতে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় এসব সাইনবোর্ড ও পোস্টার ঝোলানো হবে৷ এসব সাইনবোর্ডের মাধ্যমে অভিবাসীদের জানানো হবে, ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে তারা নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছেন এবং পাচারকারী চক্রগুলো তাদের যুক্তরাজ্যের সুযোগ নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে৷

এই প্রচারাভিযানে ফরাসি সরকারের অনুমোদন পেয়েছে যুক্তরাজ্য৷ ধারণা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগটি অভিবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা থামাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে৷ তবে শরণার্থী সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনাকে ‘চমকপ্রদ কৌশল’ মানতে নারাজ৷ তারা বলছে, অভিবাসীদের বাস্তব সহায়তা প্রয়োজন৷

চলতি গ্রীষ্মে ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার৷ এটি বাস্তবায়ন করবে ব্রিটিশ হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ অভিবাসন ইস্যুতে তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে থাকা ব্রিটিশ সরকার যেকোনো ভাবে ইংলিশ চ্যানেলে ছোট নৌকা থামাতে তৎপর৷

হোয়াইটহল-এর একটি সূত্র বলেছেন, ‘‘ফরাসি ভূখণ্ডে প্রচারাভিযান চালাতে হোম অফিসকে অনুমতি দেয়াটা ফরাসি কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত৷ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যারা চ্যানেল পাড়ি দিতে চান, তারা যেন জানতে পারেন এটি বিপজ্জনক পথ, যুক্তরাজ্যে তাদের জীবন সহজ হবে না এবং নতুন চুক্তির আওতায় তাদের ফেরত পাঠানো হতে পারে৷’’

২০২৪ সালের জুলাইয়ে লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন৷ তাদের বেশিরভাগই উত্তর ফ্রান্সের সৈকত থেকে যাত্রা করেছেন৷

চলতি বছর ৩০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন৷ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে এ বছর মারা গেছেন অন্তত ২৩ জন অভিবাসী৷ এর মধ্যে মঙ্গলবার ও বুধবার দিন মারা গেছেন চার জন৷

এই প্রচার হোম অফিসের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারের নেতৃত্বে তৈরি করা হয়েছিল৷ কিন্তু এখন তা বাস্তবায়ন করবেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ৷ দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্যের সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই তার ‘‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’’৷

শাবানা মাহমুদ দায়িত্ব নেয়ার দিন অর্থাৎ শনিবার অন্তত একহাজার ৯৭ জন অভিবাসী যুক্তরাজ্যে এসেছেন৷ যা দিনের হিসাবে সর্বোচ্চ আগমন৷

গত জুলাইয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে ‘‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’’ চুক্তিতে সই করে যুক্তরাজ্য৷ এর আওতায় যুক্তরাজ্যে অনিয়মিতভাবে আসা অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে৷ বিনিময়ে ফ্রান্সে থাকা সমান সংখ্যক অভিবাসীকে যুক্তরাজ্যে আসার অনুমতি দেয়া হবে৷

এই চুক্তিকে ‘গেমচেঞ্জিং’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা৷ এর আওতায় অনেক অভিবাসীকে আটকও করা হয়েছে৷ তবে, এখনও কাউকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়নি৷ আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসেই চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর কাজটি শুরু হবে৷ শুরুতে ৫০ জনের একটি দলকে ফেরত পাঠানো হতে পারে ইঙ্গিত মিলেছে৷

সাইনবোর্ড টানানোর এই পরিকল্পনা কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো৷

রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেন, ‘‘কঠোর সব কৌশল নেয়ার পরিবর্তে হোম অফিসের উচিত অভিবাসীদের সঠিক তথ্য ও পরামর্শ দেয়া৷ যাতে তারা রেড ক্রস বা ইউএনএইচসিআর-এর মতো বিশ্বস্ত সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত সহায়তা দিলে মানুষ সচেতন হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং বিপজ্জনক যাত্রা থেকে বিরত থাকতে পারেন৷’’

কেয়ার ফর কালে-এর প্রধান নির্বাহী স্টিভ স্মিথ বলেন, ‘‘মানুষ যুদ্ধ, নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর ফ্রান্সে পৌঁছেছেন৷ ফলে, যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পাওয়ার আশায় জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে প্রস্তুত তারা৷ একটি সাইনবোর্ড কাউকে চ্যানেল পাড়ি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের এখন এসব চমকপ্রদ কৌশল ও তথাকথিত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ বাদ দেওয়া উচিত৷ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো নিরাপদ ও সঠিক পথে আশ্রয়ের আবেদনের সুযোগ তৈরি করা৷ সরকার নিশ্চয় সৈকতে সাইনবোর্ড টানানোর জন্য ব্যয়ভার বহন করছে৷ কিন্তু আমরা চাইলে সেই অর্থ নিরাপদ পথে আবেদনের তথ্য দেয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারি৷’’

হোম অফিস শিগগিরই এই প্রচার শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ তবে, এই প্রকল্পের বাজেট সম্পর্কে এখনও কোনো তথ্য জানায়নি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে বাস-ট্রেনে জোরে কথা নয়, হেডফোন ব্যবহার করুনঃ নতুন বার্তা TfL-এর

পাঁচ সপ্তাহ বয়সে ‘খারাপভাবে’ কোভিড আক্রান্ত হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে রোমি

এই রমজানে কঠিন সময় পার করছেন ব্রিটেনের মুসলিমরাঃ স্টারমার