যুক্তরাজ্যের তথ্য অধিকার আইনের আওতায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মুসলিম বন্দিদের উপর অসদাচরণ, লাঠি দিয়ে পেটানো এবং দান্ডা বেড়ি বা হাতকড়ি পরানোর হার বেশি।
নতুন তথ্য অনুসারে, কারাগারের কর্মীরা মুসলিম বন্দিদের ওপর ব্যথাদায়ক কৌশলসহ বলপ্রয়োগ বেশি করে থাকেন।
এই তথ্য এমন এক সময় প্রকাশ পেল যখন কিছু রাজনৈতিক মহল দাবি করেছে, মুসলিম গ্যাং সদস্যরা বিভিন্ন কারাগার কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে।
ম্যানচেস্টার এরিনার একটি ঘটনায় জানা যায়, বন্দি হাশেম আবেদি তিনজন কারাগারের অফিসারের ওপর গরম তেল ও দেশীয় ছুরি দিয়ে হামলা চালান, যার ফলে দুইজন হাসপাতালে ভর্তি হন।
সামাজিক ন্যায়ের জন্য কাজ করা সংস্থা Maslaha নয়টি কারাগার থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যেখানে মুসলিম বন্দিদের সংখ্যা গড়ের চেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে এই তথ্য সংগ্রহের জন্য আবেদন করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যে কারাগার সমূহে মুসলিম বন্দিদের লাঠি ও শক্ত হাতকড়ি ব্যবহারের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
দাতব্য সংস্থাটি আরও জানতে চায়, কতবার মুসলিম বন্দিদের ব্যথাদায়ক কৌশল যেমন আঙুল বাঁকানো, কবজি বাঁকানো, উল্টো কবজি ধরা এবং কান বরাবর নার্ভে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
উক্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যায় বেলমার্শ কারাগারের তথ্য হতে জানা যায়, সেখানে প্রায়ই সন্ত্রাসবাদের সন্দেহভাজনদের রাখা হয়। ২০২৩ সালে বন্দিদের মধ্যে ৩২% ছিলেন মুসলিম। একই সময়ে শক্ত হাতকড়ি ব্যবহারের ৪৩% ও ব্যথাদায়ক কৌশলের ৬১% ঘটনা মুসলিমদের ওপর ঘটেছে।
ক্যামব্রিজশায়ারের এইচএমপি হুইটমুরে মুসলিম বন্দি ছিল ৪৩%, বছরজুড়ে ব্যবহৃত হাতকড়ি ও ব্যথাদায়ক কৌশলের ৫৫% তাদের ওপর প্রয়োগ হয়।
এইচএমপি আইসিস, থেমসমিড-এ মুসলিম বন্দির সংখ্যা ৪৫%। লাঠি ব্যবহারের ৫৭% এবং ব্যথাদায়ক কৌশলের ৫৬% ঘটনা তাদের ওপর ঘটেছে।
এইচএমপি/ওওয়াইআই ফেলথাম বি, পশ্চিম লন্ডনে মুসলিমদের সংখ্যা ৪২%। শক্ত হাতকড়ি ব্যবহারের ৫৩%, লাঠি ব্যবহারের ৫৭%, এবং ব্যথাদায়ক কৌশলের ৬৪% মুসলিমদের ওপর প্রয়োগ হয়।
এইচএমপি উডহিলে মুসলিম বন্দিরা ৩৭%। শক্ত হাতকড়ি ব্যবহারের ৪৯%, লাঠির ৬৩%, এবং ব্যথাদায়ক কৌশলের ৬৪% ঘটনা মুসলিম বন্দিদের ওপর।
শুধু একটিমাত্র কারাগারে – এইচএমপি দ্য মাউন্ট, হের্টফোর্ডশায়ারে – মুসলিমদের ওপর বলপ্রয়োগ কম ছিল।
Maslaha-এর পরিচালক রাহিল মোহাম্মদ বলেন, “এই তথ্য কারাগারে মুসলিমদের জীবনের বাস্তবতা প্রকাশ করে। তাদের লক্ষ্য করে বলপ্রয়োগ, ব্যথাদায়ক কৌশল এবং অপমানজনক আচরণ করা হচ্ছে।”
Prison Officers’ Association-এর প্রধান মার্ক ফেয়ারহার্স্ট বলেন, “বলপ্রয়োগ শুধু তখনই করা হয় যখন তা অপরিহার্য এবং প্রয়োগ করলে সেটি সর্বদা যুক্তিসঙ্গত ও প্রয়োজনীয় হয়।”
বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মুসলিম বন্দির সংখ্যা ছিল ১৫,৫৯৪, যা মোট বন্দিদের ১৮%, যদিও তারা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৬.৫%।
শ্যাডো জাস্টিস সেক্রেটারি রবার্ট জেনরিক দাবি করেছেন, ইসলামপন্থী গ্যাংগুলো কারাগারে “নিয়ন্ত্রণ করছে”। তিনি বলেন, “এই ধরনের ইসলামপন্থী গ্যাংয়ের কারাগার দখল করা উচিত নয়।”
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে HM Prison & Probation Service জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছে। তারা একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক চালু করেছে যা শেতাঙ্গ এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর উপর বলপ্রয়োগের ব্যবধান নিরীক্ষণ করবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
Prison Service-এর এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা স্বীকার করি, কারাগারে বলপ্রয়োগে আরও নজরদারি প্রয়োজন এবং ইতোমধ্যেই ব্যবহারে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের নতুন রেস ডিসপ্যারিটি ইউনিট এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করবে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ এপ্রিল ২০২৫