যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের সংকটের মধ্যে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে ইউটিউব ভিডিও। বিভিন্ন ইউটিউবার প্রকাশ্যে শিখাচ্ছে কিভাবে কম পরিচিত চ্যারিটি ভিসা ব্যবহার করে পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে দীর্ঘমেয়াদে থাকা সম্ভব। এই ভিসার মাধ্যমে মূল আবেদনকারী এক বছরের জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারেন, আর নির্ভরশীলরা যেকোনো কাজের সুযোগ পান।
নাইজেরিয়ার কেলভিন ওসাই নিজেকে “লাইফস্টাইল ও রিলোকেশন কনটেন্ট ক্রিয়েটর” হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিয়মিত এই ভিসার ব্যবহার নিয়ে ভিডিও বানাচ্ছেন। একটি ভিডিওতে, যা ২৩,০০০ বারের বেশি দেখা হয়েছে, তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে চ্যারিটি ভিসাকে “লেভারেজ” হিসেবে ব্যবহার করে পরিবারকে যুক্তরাজ্যে আনা সম্ভব। তিনি জানান, যদিও এই ভিসায় বেতনের চাকরি করা যায় না, তবুও গির্জা ও অন্যান্য চ্যারিটি সংস্থা স্টাইপেন্ড, যাতায়াত খরচ এবং বিনামূল্যে থাকার সুবিধা দিয়ে থাকে।
তোচি এসথার নামে আরেকজন জনপ্রিয় ইউটিউবার ১,৮০,০০০ সাবস্ক্রাইবারের কাছে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন একজন মহিলার কথা জানান, যিনি চ্যারিটি ভিসা ব্যবহার করে পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে এসেছেন। ওই মহিলা বলেন, তিনি নার্সারিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করলেও স্টাইপেন্ড পেয়েছেন এবং তার স্বামী যেকোনো জায়গায় যত খুশি ঘণ্টা কাজ করতে পেরেছেন।
চ্যারিটি ভিসার আবেদন ফি মাত্র £৩১৯, সাথে স্বাস্থ্যসেবা সারচার্জ এবং £১,২৭০ সঞ্চয়ের প্রমাণ দিতে হয়। অন্যান্য ভিসার তুলনায় খরচ কম হওয়ায় এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যুক্তরাজ্য সরকারের অনুমোদিত ১,৪০০ চ্যারিটি এই ভিসা স্পনসর করে, যার মধ্যে অধিকাংশই গির্জা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
ইউটিউব ভিডিওগুলো শুধু চ্যারিটি ভিসার কৌশল নয়, আশ্রয়ের আবেদন সম্পর্কেও নির্দেশনা দিচ্ছে। শেরিসা কিউপিড-বেনেট নামে এক অভিবাসন আইনজীবী তার ভিডিওতে দাবি করেন, ইসলাম থেকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ভিত্তিতে আশ্রয়ের আবেদন প্রায় সবসময় সফল হয়। যদিও তিনি কোনো অনৈতিক পদ্ধতির পরামর্শ দেননি, তবুও এই ভিডিওগুলোকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বেড়েছে।
ইতোমধ্যেই অভিবাসন আইনজীবী ও ইউটিউবারদের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে হোম অফিসের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অভিবাসী সংকটের মধ্যে এ ধরনের কনটেন্ট সরকারকে আরও চাপে ফেলেছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি ক্যানারি ওয়ার্ফের চার তারকা ব্রিটানিয়া ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের বাইরে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি মুখোশধারী দুষ্কৃতিকারীদের হস্তক্ষেপে সহিংস রূপ নেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
চ্যারিটি ভিসার অপব্যবহার এবং ইউটিউব কনটেন্টে এর প্রচার যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এই ভিসা রুটে অভিবাসীর ঢল আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য সান
এম.কে
০৫ আগস্ট ২০২৫