গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা ৬৪ জন অনিয়মিত অভিবাসী নিয়ে একটি বিশেষ বিমান বুধবার ঢাকায় অবতরণ করেছে। বাংলাদেশ দূতাবাস গ্রিস জানিয়েছে, এসব ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জনকে গ্রিস থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিরা অন্য দেশ থেকে ফেরত এযেছেন।
গ্রিস, স্পেন, মাল্টা, ইটালিসহ বিভিন্ন দেশে থাকা ৬৪ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসী নিয়ে একটি চার্টার বিমান বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮:৪০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করেছে।
গ্রিসের আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রনালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “মঙ্গলবার ইউরোপীয় প্রত্যাবাসন বা জয়েন্ট ইইউ রিটার্ন অপারেশনের আওতায় এবং ইইউ বহিঃসীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় আবেদন করে প্রত্যাখ্যান হওয়া ৬৪ জন বাংলাদেশিকে নাগরিককে জোরপূর্বক ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের মধ্যে গ্রিস থেকে ২০ জন, রোমানিয়া থেকে ৯ জন, ইটালি থেকে ২ জন, ফ্রান্স থেকে ৩ জন, মাল্টা থেকে ২ জন, স্পেন থেকে ৪ জন, সুইডেন থেকে ২ জন এবং সাইপ্রাস থেকে ২০জন রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে গ্রিক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশিদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের পরিচয় রিডমিশন কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরসিএমএস) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চিহ্নিত করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সই হওয়া এসওপির আওতায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এসব নাগরিকদের পরিচয় চিহ্নিত করতে ইইউ ও ফ্রন্টেক্সকে সহায়তা করেছে।
এথেন্স দাবি করেছে, ২০২৩ সালের শুরু থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশি নাগরিকদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ঘটনা নিয়মিত ঘটবে।”
অপরদিকে বাংলাদেশ দূতাবাস গ্রিসের মিনিস্টার মোহাম্মদ খালেদও ইইউর জয়েন্ট রিটার্ন অপারেশনের আওতায় সংশ্লিষ্ট অনিয়মিত অভিবাসীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর কথা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে ২০ জনকে গ্রিস থেকে পাঠানো হয়েছে বলে বুধবার সকালে আমাদের নিশ্চিত করেছে গ্রিক কর্তৃপক্ষ। তাদের সবার কাছেই নিজেদের পাসপোর্ট ছিল। ফলে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে দূতাবাসের পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন পড়েনি।”
তবে ঢাকায় ডিপোর্ট হওয়া অভিবাসীরা দাবি করেছেন গ্রিস থেকে মোট ২৬জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ঢাকায় ফেরত যাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে অনেকের সাথেই বুধবার কথা বলে বিভিন্ন তথ্য জানা গেছে। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে গ্রিসে ছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমি ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে এথেন্সের মেনিদি ক্যাম্পে আটক ছিলাম। আমাদেরকে কিছু না বলেই এয়ারপোর্টে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় মোট ২৬ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে বিমানটি এথেন্স থেকে যাত্রা করে। পরবর্তীতে সেখান থেকে সাইপ্রাসে যাত্রা বিরতি দেয়া হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, ট্রানজিট অবস্থায় সাইপ্রাসে ইটালি, চেক প্রজাতন্ত, মাল্টা, স্পেন, সুইডেন, রোমানিয়াসহ অন্যান্য ইইউ দেশে থেকে আসা বাংলাদেশিরা আমাদের সাথে যোগ দেয়। আমরা মোট ৬৩ জন ছিলাম ফ্লাইটে। একজন অভিবাসীর সাথে দুইজন পুলিশ চার্টার ফ্লাইটে উপস্থিত ছিল। তাদের সক্রিয় উপস্থিতিতে আমাদেরকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতির কারণে আমরা একে অপরের সাথে ভালো করে কথা বলতেও পারিনি৷
অপরদিকে, ফেরত আসা বিভিন্ন ব্যক্তিরা আইনজীবীদের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলেন।