চলতি বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অন্তত ৫৬ হাজার আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে আসতে পারেন৷ ২০২২ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি৷ আদালতে উপস্থাপন করা যুক্তরাজ্য সরকারের এক নথিতে এমন আভাস দেয়া হয়েছে৷
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫৬ হাজার অভিবাসী পৌঁছালে, এক লাখ ৪০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর বাসস্থানের প্রয়োজন হবে যুক্তরাজ্যে৷
২০২২ সালে ছোটো নৌকা নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটির দক্ষিণ উপকূলে আসেন ৪৫ হাজার অভিবাসী৷ যা তার আগের দুই বছরের তুলনায় অন্তত দশ গুণ বেশি৷ ফলে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ছোট নৌকায় আসা অভিবাসীদের ঠেকানোকে নিজের পাঁচটি অগ্রাধিকারের একটি বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, চলতি বছর এ পর্যন্ত চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি অভিবাসী ব্রিটেনে পৌঁছান৷
লন্ডনের হাইকোর্টে বুধবার একটি মামলার অংশ হিসাবে সরকারের পক্ষ থেকে অভিবাসন বিষয়ক নথিটি দাখিল করা হয়৷ এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক লাখ নয় হাজারেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাজ্য৷ এদের মধ্যে ৪৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে রাখা হয়েছে হোটেলে৷ আবাসনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিদিন ৬২ লাখ পাউন্ড খরচ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় নথিতে৷
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘অভিবাসীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷ এ বছর ৫৬ হাজার অভিবাসী ছোটো নৌকা নিয়ে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ডের উপকূলে আসতে পারেন, এমন শঙ্কা মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷’’
ফলে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থী মানুষের সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷
সম্প্রতি অভিবাসন ইস্যুটি ব্রিটিশ রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে৷ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে গেল মার্চে ঋষি সুনাকের রক্ষণশীল সরকার একটি নতুন আইন ঘোষণা করেছে৷ এই আইনের মাধ্যমে, ছোট নৌকায় আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় চাওয়ার অধিকার মিলবে না৷ তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে অথবা অন্য কোনো নিরাপদ দেশে তাদের পাঠানো হবে৷
হাজার হাজার অভিবাসীকে চার হাজার মাইলেরও বেশি দূরের দেশ রুয়ান্ডায় স্থানান্তরে একটি চুক্তিতেও সম্মত হয়েছে ব্রিটেন৷ গত বছর রুয়ান্ডার সঙ্গে করা চুক্তিটি কতোটা আইন সম্মত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে আদালতে৷ ফলে, সেই চুক্তির আওতায় কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে এখনও রুয়ান্ডায় পাঠাতে পারেনি যুক্তরাজ্য৷
আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে না রেখে রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে গেল মার্চে মধ্য আফ্রিকার দেশটিতে সফর করেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। রুয়ান্ডার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ বিষয়ক আরো কিছু সমঝোতা স্মারকেও সই করেছে লন্ডন ও কিগালি।
এর মধ্যেই আশ্রয়প্রার্থীদের পরিত্যক্ত সামরিক ঘাঁটি ও ভাসমান নৌযান বা বার্জে রাখার বিষয়টিও অনেকটা চূড়ান্ত করে ফেলেছে সুনাক সরকার৷ দক্ষিণ ইংল্যান্ডের পোর্টল্যান্ড বন্দরে একটি ভাসমান বার্জ ‘বিবি স্টকহোম’-এ প্রায় ৫০০ পুরুষ অভিবাসীকে রাখতে চায় যুক্তরাজ্য। অবশ্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয়দের বাধা ও অসন্তোষের মুখেও পড়েছে সরকার৷
লন্ডনের উত্তর-পূর্ব দিকের একটি বিমান ঘাঁটিকে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন নির্মাণে ব্যবহার করতে দিতে চায় না বেনট্রি কাউন্সিল৷ সরকার যেন এমন কোনো উদ্যোগ নিতে না পারে, সেজন্য হাইকোর্টে গেছে কাউন্সিলটি৷