TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

“একজন আসলে, একজন যাবে” নীতি মানবতাবিরোধী—অভিযোগ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থী বিনিময়ের বিতর্কিত চুক্তি স্থগিতের দাবিতে ফ্রান্সে আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। দুই দেশের মোট ১৫টি মানবাধিকার সংস্থা যৌথভাবে ফরাসি রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলে মামলা করেছে, যেখানে তারা বলেছে এই “একজন আসলে, একজন যাবে” নীতির মাধ্যমে শরণার্থীদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

জুলাই মাসে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো প্রতিটি আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠানো হবে ফ্রান্সে, বিনিময়ে ফ্রান্স থেকে একজনকে নেওয়া হবে যুক্তরাজ্যে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই বিনিময় প্রক্রিয়া মানবিক মর্যাদা ও আন্তর্জাতিক আশ্রয় অধিকার আইনের পরিপন্থী। ফরাসি আইনজীবী লিওনেল ক্রুসোয়ে জানিয়েছেন, “আমরা রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলে আপিল করেছি, কারণ এই চুক্তি শরণার্থীদের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে না এবং মানবিক মর্যাদাকে উপেক্ষা করছে।”

তিনি আরও বলেন, চুক্তিটি কার্যকর করার আগে ফরাসি সংসদে তা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা উচিত ছিল, কিন্তু সরকার সেই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। এর ফলে চুক্তিটি ফরাসি সংবিধানকেও লঙ্ঘন করছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ২৬ জন আশ্রয়প্রার্থীকে এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ফ্রান্সে। তারা এসেছে ইরান, এরিত্রিয়া ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ দেশ থেকে। ফেরত আসা ২৫ জন আশ্রয়প্রার্থী এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এখন “অত্যন্ত কঠিন ও অনিরাপদ পরিবেশে” বাস করছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবার, নিরাপদ আশ্রয়, চিকিৎসা সেবা কিংবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পর্যন্ত নেই। বিবৃতিতে তারা বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আবেদন করেছে, “আমাদের অধিকার যেন সম্মানিত হয়, এবং ন্যায্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।”

ফরাসি কর্তৃপক্ষের দেওয়া কিছু নথিতে দেখা গেছে, ফেরত আসা শরণার্থীদের অনেককেই আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে, ডাবলিন কনভেনশনের আওতায়। ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য সরাসরি এ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়লেও নতুন এই চুক্তির মাধ্যমে তারা আবার পরোক্ষভাবে সেই ব্যবস্থা ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো এক শরণার্থী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “আমার কাছে এক ইউরোও নেই, আমি নিরাপদ নই। চোরাচালানকারীরা অস্ত্র হাতে ঘোরে, তারা আশ্রয়প্রার্থীদের মারধর করে। আমি ভয়ে আছি, হয়তো আমাদের আবার সেই দেশেই ফেরত পাঠানো হবে, যেখান থেকে আমরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছিলাম।” আরেকজন বলেন, “এই চুক্তি ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে থাকবে। আমাদের জীবনের বিনিময়ে দুই দেশের সরকার রাজনৈতিক উদাহরণ তৈরি করছে।”

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। এক মুখপাত্র বলেন, “ছোট নৌকায় অবৈধভাবে আগতদের ফেরত পাঠাতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফ্রান্সের সঙ্গে এই চুক্তি আমাদের সীমান্ত সুরক্ষার অংশ।” মন্ত্রণালয়ের দাবি, চুক্তিটি ফরাসি ও ইউরোপীয় আইন অনুযায়ী অনুমোদিত, এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বৈধভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য যেভাবে সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে, তা মানবতার মৌলিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। ফ্রান্স–যুক্তরাজ্য এই নতুন চুক্তি তাই কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি মানবাধিকারের ভবিষ্যতের ওপরও এক গভীর প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৫ অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে উইলিয়াম হিল গ্রুপকে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার জরিমানা

যুক্তরাজ্যে বেগবান হচ্ছে ‘স্মার্টফোন মুক্ত শৈশব’ আন্দোলন

যুক্তরাজ্যের সাড়ে ৪ লাখ কর্মসংস্থানকে সহায়তা করবে ‘নিট জিরো’

অনলাইন ডেস্ক