সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চার দফা থেকে সরে এখন এক দফায় নেমে এসেছেন। তারা দাবি করেছেন, সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে। এ দাবিতে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, বাংলামটর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা রাজধানীর আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও বিক্ষোভ করেন।
সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ আন্দোলনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় সড়ক, মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কথা, আদালতের মাধ্যমে নয়, আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করবেন।
বিভিন্ন মোড়ে অবরোধের কারণে যানজটে এক রকম স্থবির হয়ে পড়ে পুরো ঢাকা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকতে দেখা গেছে অফিস ছুটির পর ঘরমুখো নগরবাসীকে। বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৪ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-পটুয়াখালী সড়ক অবরোধ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কোটাবিরোধীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা হাইকোর্টের রায়। এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সাবজুডিস। কারণ আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে’।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আদালতের বাইরেও সমাধান সম্ভব। আদালতের রায় সরকার মানতে বাধ্য। কিন্তু কোটার পক্ষে বিপক্ষের নেতৃবৃন্দ সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে পারেন।
আমার মনে হয়, যারা কোটাবিরোধী, তারা কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বাতিল হোক, তা তারা চান না। সুতরাং আদালতের বাইরেও আলোচনার মাধ্যমে এটি সমাধান উভয়পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক হবে’!
এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন,‘পূর্ণাঙ্গ রায় দেখার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে সাদা চোখে দেখলে, সরকার এর আগে প্রজ্ঞাপন জারি করে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। ফলে, এটা স্পষ্ট যে, সরকারের হাতে কোটা বাতিলের ক্ষমতা আছে। এখন যেহেতু আদালতের রায়ে কোটা আবার বহাল হয়েছে আর এটা তো সত্য যে, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সত্যিকার অর্থে যারা অনগ্রসর, তাদের জন্য কোটা রাখা প্রয়োজন। তাই, সরকার কিছুদিন পরে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে আবার প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। আদালতের ব্যাপারে সরকার তো কিছু বলতে পারে না। কিন্তু তার প্রজ্ঞাপন জারি করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের আছে।’
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। এখন তো কারো কিছু করার নেই। আমরা হাইকোর্টের রায়ের পর পরই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আদালত কী সিদ্ধান্ত দেয়, সেটা দেখতে হবে। বিচার-প্রক্রিয়া চলাকালে তো কিছু করা যাবে না’!
কোটা-বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারী আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কোটা সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান চাচ্ছি। আমাদের সংবিধানে কোটা আছে। তাই, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সত্যিকার অর্থে যারা অনগ্রসর, তাদের জন্য কোটা রাখা যায়। এটা ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। কোটা সংস্কার করে এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে।’
তবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘আমরা আদালতের রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা ফিরে পেয়েছি। সরকারকে এখন কোটা বহালের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। সরকার যদি আদালতের রায়ের উপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা, করে তাহলে আমরা সারাদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো’!
এম.কে
১৪ জুলাই ২০২৪