27 C
London
July 4, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

গুপ্তচর সন্দেহে আফগানদের ফেরত পাঠাচ্ছে ইরান, জাতিসংঘের সতর্কতা

ইসরায়েল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে হাজার হাজার আফগান নাগরিককে ফেরত পাঠাচ্ছে ইরান। গুপ্তচর সন্দেহে অভিযান চালিয়ে আফগানদের আটক ও ফেরত পাঠানোর হার কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং মানবিক সংস্থাগুলো।
৩৫ বছর বয়সী এনায়েতুল্লাহ আসগরি, যিনি তালেবান দখলের পর ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, এখন আবার আফগানিস্তানে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানান, “তারা আমাদের গুপ্তচর মনে করত, ঘৃণার চোখে দেখত। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ পর্যন্ত বলত—তোমরাই আমাদের শত্রু, আমাদের ভেতর থেকে ধ্বংস করছ।”

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) জানায়, চলমান সংঘাতের সময় ইরান প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারের বেশি আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে, যা আগের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি।
ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২২ সালে ইরানে প্রায় ২৬ লাখ আফগান বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস করছিলেন।

তেহরানের সরকারি মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।” তবে তিনি গুপ্তচরবিরোধী অভিযানের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা একে বিতাড়ন নয়, বরং নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখছি।”

জাতিসংঘের আফগানিস্তান প্রতিনিধি আরাফাত জামাল বলেন, “আমরা বুঝি ইরান একটি ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবে আফগানদের বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে। এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য নয়।”

তিনি সতর্ক করেন, পাকিস্তানও আফগানদের ফেরত পাঠাচ্ছে—যা মিলে আফগানিস্তানকে আবার এক গভীর মানবিক সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। ২০২৩ সাল থেকেই পাকিস্তান আফগানদের ফেরত পাঠানোর বড় আকারের উদ্যোগ নিয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছর ইরান ও পাকিস্তান থেকে ১২ লাখের বেশি আফগান নিজ দেশে ফিরে গেছেন। এদের অনেকেই শুধু গায়ে থাকা কাপড় এবং হাতে থাকা সামান্য মালপত্র নিয়ে ফিরেছেন।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে। তালেবান শাসনের পর দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থবির, আন্তর্জাতিক অনুদান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অভাবে UNHCR-এর আফগানিস্তান কার্যক্রমও ভুগছে। এ বছর সংস্থাটি তাদের প্রয়োজনীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশও পায়নি। তিন বছর আগে যেখানে সহায়তা ছিল ৩২০ কোটি ডলার, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৫৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারে।

তেহরান থেকে ফেরত আসা ২৬ বছর বয়সী আহমাদ ফাওয়াদ রহিমি জানান, তার বৈধ কাজের ভিসা ছিল, কিন্তু যুদ্ধের আতঙ্কে পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় তিনি নিজেই দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

ইরান সরকারের মতে, বৈধ অভিবাসীরা—যেমন চিকিৎসক, লেখক, শিক্ষক—দেশে থাকতে পারবেন। তবে যাদের বৈধতা নেই, তাদের বিরুদ্ধে “জাতীয় নীতির ভিত্তিতে” ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি আফগানিস্তানকে আরও অস্থিতিশীল করবে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা আফগান জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
০৪ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

বিটকয়েনের দাম উঠতে পারে ১ লাখ ডলার

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নিরাপদ থাকবে যেসব দেশ

নিউজ ডেস্ক

পদার্থে নোবেল পেলেন যে ৩ জন