সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীন উভয় দেশই বাংলাদেশে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান বৃদ্ধি করেছে। ফলস্বরূপ দেশ দু’টির মধ্যে বাড়ছে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব।
বাংলাদেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা থাকলেও কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, ভারতের নীতিনির্ধারকদের বাংলাদেশের একটি অংশের মানুষের মধ্যে থাকা ভারতবিরোধী মনোভাবকে বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর কিছুটা অবশ্য বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি নতুন দিল্লির সমর্থন বিশ্লেষণ করে বোঝা যেতে পারে। তবে বর্তমান ভারতের জোট সরকারের ভুমিকা একছত্রভাবে এক দলের সাথে নয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এ বিষয়ে গবেষণা ফোরাম মন্ত্রয়া-এর শান্তি মারিয়েট ডি’সুজা বলেন, ‘এই অস্বস্তিকর নীরবতা হলো হাসিনা সরকারের প্রতি এবং চলমান অস্থিরতাকে সামলাতে সরকারের নীতির প্রতি ভারতের নীরব সমর্থন। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ভারতঘেঁষা শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ভারত।’
এদিকে সরকারের সমালোচকদের দাবি, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
শান্তি মারিয়েট ডি’সুজা বলেন, ‘নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ করতে বিরোধীদের দাবি বাস্তাবয়নে মার্কিন সরকারের চাপ থেকে হাসিনা সরকারকে সুরক্ষা দিয়েছে ভারত। বর্তমান নীরবতা হলো ওই নীতির ধারাবাহিকতা।’
শান্তি মারিয়েট ডি’সুজার মতে, নানা কৌশলগত কারণে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়ন, ভারতে অভিবাসন বন্ধ করা।
তিনি বলেন, ‘দেশটিতে ব্যাপক চীনা বিনিয়োগ সত্ত্বেও নতুন দিল্লি হাসিনাকে এমন একজন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, যিনি বাংলাদেশকে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে বিরত রাখবেন। এর ফলে তাকে সমর্থন করা দিল্লির একমাত্র কৌশল। এমনকি যদিও তার নেয়া নীতি কখনো কখনো কর্তৃত্ববাদীঘেঁষা হয়ে থাকে।’
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হাসিনা সরকারের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা এবং সেইসাথে বিএনপি ও ইসলামিস্ট দলগুলোর শক্তিশালী অবস্থান ভারতের জন্য খুব একটা ভালো সংবাদ নয়।
তবে এ বিষয়ে ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি হাসিনা সরকারের চরম প্রতিক্রিয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। পাবলিক পালস বোঝার ক্ষমতা একজন রাষ্ট্র প্রধানের না থাকলে বুঝতে হবে দেশ চালানোর সক্ষমতা তিনি হারিয়েছেন।
সহিংসতার সব দায় বিরোধী দল এবং ইসলামিস্টদের উপর চাপিয়ে দেয়ার যে চেষ্টা তারও সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকা এবং সেই সাথে অপমানজনক মন্তব্য করার কারণে আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে।’
সূত্রঃ ডয়চে ভেলে
এম.কে
০২ আগস্ট ২০২৪