3.5 C
London
November 22, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

চুরি হচ্ছে ই-পাসপোর্টের তথ্য

একজনের ই-পাসপোর্টের তথ্য জাল করে তৈরি করা হচ্ছে এমআর (মেশিন রিডেবল) পাসপোর্ট। এক ই-পাসপোর্টধারী বিদেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখেন, ঐ দেশের ইমিগ্রেশনে তার নাম-পরিচয়ের তথ্য দিয়ে এমআর পাসপোর্টের তথ্য রয়েছে। ঐ এমআর পাসপোর্টধারী সে দেশে অবস্থানও করছেন। কিন্তু এমআর পাসপোর্টে সব তথ্য মিলে গেলেও শুধু ছবি থাকে ভিন্ন ব্যক্তির। এমআর পাসপোর্টে শো করা ছবির ব্যক্তিই হলেন প্রতারক চক্রের সদস্য। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন অফিস থেকেই ঐ এমআর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। এরকম একটি ভয়ংকর প্রতারক চক্রের হাতে প্রতারিত হচ্ছেন ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তি।

এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার বলেন, ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্যারিসে একজন বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তির পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে এমআর পাসপোর্ট বানানো হয়েছে। ঐ এমআর পাসপোর্ট দিয়ে অন্য ব্যক্তি ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। ই-পাসপোর্টের তথ্য জালিয়াতি করার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও এটা সত্যি সত্যি হয়েছে কি না—তা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।

 

 

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৫ মে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব কে এফ এম শরহান শাকিল বাংলাদেশের মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ নামে এক ব্যক্তির কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিসের নজরে এসেছে। উক্ত পোস্টে জনৈক আশরাফ ইসলাম উল্লেখ করেছেন যে, ‘মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ সাহেব গত সপ্তাহে ফ্রান্স সফরে এসে অন্য এক রকম বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেলেন। বাংলাদেশ ফ্রান্স দূতাবাস তার নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ সব ডাটা ব্যবহার করে অন্য এক ব্যক্তির নামে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করেছে।’

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস-এ ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ নামে চারটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, যাদের কারো জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা সাতক্ষীরা নয় এবং কারো জন্ম তারিখ, পিতার নাম ও মাতার নামের সঙ্গে আপনার জন্ম তারিখ, পিতার নাম ও মাতার নামের মিল নেই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিসে ই-পাসপোর্ট প্রদানের সুবিধা নেই। বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস থেকে আপনার নাম-ঠিকানা, ফোন, সব ডাটা ব্যবহার করে অন্য ব্যক্তির নামে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, তা একটি গুরুতর অভিযোগ। দূতাবাস এই অভিযোগ সম্পর্কে ঢাকা পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মাধ্যমে তদন্ত অনুসন্ধান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

 

 

 

 

এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) উঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর থেকে এমআরপি ডেলিভারি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখনো এমআরপি ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে। তবে শুধু জরুরিভিত্তিতে বিদেশগামী, অসুস্থ রোগী ও কূটনীতিক পাসপোর্টধারীদের এমআরপি দেওয়া হয়ে থাকে, তা-ও আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সত্তরোর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তি বিশেষ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাদের দ্রুত বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন, তাদের ক্ষেত্রে এমআরপি ইস্যু করার সুপারিশ করা হয়।

 

 

 

 

 

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের ভিতরে একটি চক্র রয়েছে, যারা বিদেশে দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করা এমআরপি পাসপোর্ট তৈরি করে দিতে সহায়তা করে। দূতাবাসে কর্মরত একশ্রেণির অসাধু কর্মচারীরা ঢাকায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঐ সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ করে ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর দূতাবাস থেকে জরুরিভিত্তিতে এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন করা হয়। আবেদনে ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ সবই এক থাকে। শুধু ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তির ছবির সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট আবেদনকারীর ছবি যুক্ত করা হয়। এরপর ঐ এমআরপি পাসপোর্ট দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করা হয়। এভাবেই বিদেশে, বিশেষ করে ইউরোপে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর অসাধু কর্মচারীরা ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তির তথ্য ব্যবহার করে তৈরি করছে এমআরপি পাসপোর্ট। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ই-পাসপোর্ট চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজার ই-পাসপোর্ট বিতরণ করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

 

আরো পড়ুন

দেশের দুটি কিডনিই খেয়ে ফেলেছে বিগত সরকারঃ ড. দেবপ্রিয়

রকমারিতে জাফর ইকবালের বই ‘নট অ্যাভেইলেবল’

শেখ হাসিনার উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘দেশে আসেন কিন্তু গণ্ডগোল পাকাবেন না’