রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় ঋণ। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (ওএনএস) হিসাব বলছে, ব্রিটিশ সরকারের বর্তমান ঋণের পরিমাণ পৌঁছে গেছে অর্থনীতিতে বার্ষিক উৎপাদন বা জিডিপির ১০০ শতাংশে, যা গত ছয় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
শুক্রবার ওএনএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে যুক্তরাজ্য সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি পাউন্ড বা ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার, যা দেশটির বার্ষিক উৎপাদনের সমান।
ওএনএসের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রান্ট ফিজনার বলেন, ‘গত মাসে ঋণের পরিমাণ ছিল ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪০০ কোটি ডলার বেশি। আগস্টে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে এটি ছিল এখন পর্যন্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ।’
ট্রেজারি বিভাগের চিফ সেক্রেটারি ড্যারেন জোনস মনে করেন, দেশের পাবলিক ফাইন্যান্স খাতকে কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন সরকার যে উদ্বেগজনক অবস্থায় রেখে গেছে, রেকর্ড জাতীয় ঋণ তারই প্রতিফলন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রশ্নে লেবার পার্টিকে অবশ্যই অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
ড্যারেন জোনস বলেন, ‘আমরা যখন ট্রেজারি বিভাগে আসি, তখন উত্তরাধিকার সূত্রে যে অর্থনীতি হাতে পেয়েছি, তা শ্রমজীবীদের পক্ষে ছিল না। কভিড-১৯ মহামারীর সময়টা বাদ দিলে এর আগে কখনই আগস্টে এত ঋণ নেয়া হয়নি। ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১০০ শতাংশে পৌঁছে গেছে, যা গত শতাব্দীর ষাটের দশকের পর সর্বোচ্চ।’
২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় যুক্তরাজ্যের ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। এরপর আরো বেড়ে যায় কভিড-১৯ মহামারীর সময়। এছাড়া কয়েক বছরের শ্লথ অর্থনৈতিক গতিও ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
জাতীয় ঋণের বিষয়টি অনেক দিন ব্রিটিশ অর্থনীতিতে আলোচিত বিষয় হয়ে রয়েছে। সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইওয়াই আইটেম ক্লাবের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ম্যাট সনেল বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় রয়ে গেছে এবং বছরের বাকি সময় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।’
কারণ হিসেবে ম্যাট সনেল বলেন, ‘সরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আগামী কয়েক মাসে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হতে পারে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগে শ্রমিকবহির্ভূত খাতেও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের রাজস্ব বিভাগের চ্যান্সেলর রাচেল রিভস সম্প্রতি সতর্ক করে জানান, আগামী অক্টোবরে বাজেটের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে আয়কর, করপোরেশন কর ও ভ্যাট বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।
নাগরিকদের দৈনন্দিন খরচ কমাতে শীতকালীন জ্বালানি ভাতা প্রবর্তন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। গত মাসে এ ভাতা বাতিল করার ঘোষণা দেন রাচেল রিভস। সামাজিক সেবা সংস্কারের পরিকল্পনা স্থগিত করার পাশাপাশি সড়ক, রেল ও হাসপাতালে বিনিয়োগ কমানোর ঘোষণাও দেন তিনি।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪