TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

জনবিচ্ছিন্নদের সরিয়ে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আনবঃ দ্য ওয়ালকে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো কোনো বাংলা অনলাইন নিউজ প্ল্যাটফর্মকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ‘দ্য ওয়াল’-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারের নেওয়া এই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি দলীয় সংস্কার, নেতৃত্ব পরিবর্তন, চলমান রাজনৈতিক সংকট, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, ভারত সরকারের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে বিস্তৃতভাবে কথা বলেন।

 

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে যে বার্তা তিনি পাচ্ছেন, তা স্পষ্ট—জনবিচ্ছিন্ন ও অকার্যকর নেতৃত্ব সরিয়ে নতুন প্রজন্মকে সামনে আনতে হবে। তার ভাষায়, দলকে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না; দেশের প্রতিটি জেলা ও অঞ্চল থেকে স্থানীয় বাস্তবতা বোঝে—এমন নেতৃত্ব উঠে আসা জরুরি। একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, দলের নীতির সঙ্গে আপস না করেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।

নিজের সন্তানদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে জানান, আওয়ামী লীগ কোনো পারিবারিক দল নয়। সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যদি সামনের সারির নেতৃত্বে আসতে চান, তাহলে তাদেরও যোগ্যতা ও দলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই প্রমাণ দিতে হবে। তিনি বলেন, “একই মুখ দিয়ে ভিন্ন ফল আশা করা যায় না”—নতুন নেতৃত্ব ছাড়া প্রজন্মগত ব্যবধান ঘোচানো সম্ভব নয়।

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মতে, গত ১৬ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার পরিকল্পিতভাবে সংবিধানের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। প্রধান বিচারপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে দুর্বল করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বর্তমানে দেশের শেষ সাংবিধানিকভাবে নিযুক্ত নেতা, এবং তার সরে যাওয়ার অর্থ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আরও গভীর সংকট।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গৃহযুদ্ধ চায় না—তারা চায় ভোটাধিকার ফিরে পেতে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মদদপুষ্ট কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার দাবি, বিরোধী দল নিষিদ্ধ করা, গণগ্রেপ্তার, সংখ্যালঘু ও সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা—সব মিলিয়ে বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগকে বলির পাঁঠা বানানোর কৌশল নিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে।

ভারতে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে রাখার সিদ্ধান্তে ভারতের সংসদের সব দলের সমর্থন প্রমাণ করে বিষয়টি কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তকে তিনি “সহমর্মিতা ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন” হিসেবে বর্ণনা করেন। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ এশিয়ায় চরমপন্থার উত্থানের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে এবং ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তিকে দৃঢ় করেছে।

আওয়ামী লীগের ওপর দমন-পীড়ন নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশ্য নীরবতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিবেশী ও মিত্রের ভূমিকা পালন করছে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পক্ষ হিসেবে নয়। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মহল মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক দমন-পীড়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং ভারতও পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের লাখো মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ তাকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—আওয়ামী লীগকে যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়, তাহলে দলটি ভোটের বড় অংশ পাবে। তার ভাষায়, “আমাদের নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া মানে বাংলাদেশের জনগণকে একটি সত্যিকারের বৈধ সরকার বেছে নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা।”

সূত্রঃ দ্য ওয়াল

এম.কে

আরো পড়ুন

আমি ভোট দিতে পারলে জিয়ার দর্শনকেই সমর্থন করতামঃ উইলিয়াম বি মাইলাম

বাংলাদেশ চীন থেকে ১৬টি J-10C যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পথেঃ সম্ভাব্য G2G চুক্তির ইঙ্গিত

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে উত্তেজনা, বিএসএফ জওয়ানের আঙুল কাটলেন বাংলাদেশি কৃষক