15.7 C
London
November 5, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

জাতিসংঘের পানি চুক্তিতে বাংলাদেশ: ভারতের সঙ্গে সীমান্ত পানির ভবিষ্যত নিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব

বাংলাদেশ এই বছর দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘের জল সংরক্ষণ চুক্তিতে যোগদান করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো সীমান্ত পারাপার নদীগুলোকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। জাতিসংঘ মনে করছে, এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আঞ্চলিক দ্বন্দ্বও জটিল হতে পারে।

 

বাংলাদেশের জল সংকট বহুমাত্রিক। দেশের অর্ধেক মানুষ গুরুতর খরার ঝুঁকিতে বসবাস করে, প্রায় ৬০% জনগণ উচ্চ বন্যার ঝুঁকিতে আছে। প্রতি বছর প্রায় ২০–২৫% জমি বন্যায় প্লাবিত হয়। এছাড়া, ৬৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ নিরাপদ ও সুষ্ঠু পানি ও বেসিন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনও দেশের জল নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে।

বাংলাদেশের নদী সম্পদ প্রায় সম্পূর্ণরূপে সীমান্ত পারাপার নদীর ওপর নির্ভরশীল। ভারতের সঙ্গে এটি বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী ব্যবস্থা ভাগাভোগ করে: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা। চীনের মোটুও হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প ও ভারতের বাঁধ কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশে পানি প্রবাহ সীমিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট দেশের নদীগুলোকে আইনি ব্যক্তির মর্যাদা প্রদান করে। এরপরই দেশটি জাতিসংঘের জল সংরক্ষণ চুক্তিতে যোগ দেয়। এই চুক্তি মূলত সীমান্ত পারাপার জল ব্যবস্থাপনার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

ভারতের জন্য চুক্তিতে বাংলাদেশের যোগদান গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে সীমান্ত জলের সমস্যা সমাধান করে আসছে। তবে বাংলাদেশের UN Water Convention-এ যোগদান ভবিষ্যতে ভারতের দরকষাকষি শক্তি হ্রাস করতে পারে। বিশেষ করে ২০২৬ সালে গঙ্গা নদীর চুক্তি নবায়নের সময় বাংলাদেশ আরও বেশি পানি দাবি করতে পারে।

সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত নতুন প্রতিষ্ঠানগত কাঠামো ভারতের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। গঙ্গা নদীর চুক্তি নবায়ন করলে পূর্ব ভারতের পানি চাপ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং শুষ্ক মৌসুমে ভারতের জল সঞ্চয় ক্ষমতা পরীক্ষা হবে।

বাংলাদেশের পদক্ষেপ আঞ্চলিক অন্যান্য দেশ, যেমন নেপাল ও ভূটানকেও প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশ চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক হাইড্রো-সহযোগিতা বিবেচনা করছে, যা ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

পরিশেষে, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক জল কূটনীতি ও নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ভারতের জন্য এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে—দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আস্থা রাখবে নাকি নতুন বহুপাক্ষিক মানদণ্ড অনুসরণ করে তার জল নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাব রক্ষা করবে।

সূত্রঃ দ্য কনভারসেশন

এম.কে

আরো পড়ুন

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ

বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাতকে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র ঘোষণা

দেশের সব সরকারি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার