21.7 C
London
August 19, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানঃ ভুয়া মামলায় অব্যাহতি পাবেন নিরপরাধরা

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনায় যাদের গণহারে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে—এমন নিরপরাধ ব্যক্তিদের ভুয়া মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে দেশে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ (কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর)-এর ১৭৩ ধারায় ‘অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন ইত্যাদি’ শিরোনামে নতুন একটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এসংক্রান্ত একটি পরিপত্র শিগগিরই জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এটি কার্যকর হলে নিরপরাধ ব্যক্তিদের দ্রুতই মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, প্রস্তাবিত পরিপত্রে ভুয়া মামলা থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের অব্যাহতি দিতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আইন উপদেষ্টা/আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি, মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিনটি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কমিটিগুলোই মামলা থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের অব্যাহতি দিতে চূড়ান্ত সুপারিশ দেবে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন অধিশাখার প্রধান কাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনায় যাদের গণহারে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে এবং তা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে—এমন ব্যক্তিদের ভুয়া মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে সিআরপিসিতে নতুন ধারা হয়েছে। সেটি কার্যকর করতে শিগগিরই পরিপত্র জারি করো হবে।

সূত্র জানায়, সিআরপিসির ১৭৩-এর নতুন ধারায় বলা হয়েছেঃ

১. অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন তলবঃ এখন থেকে মামলার তদন্ত চলাকালে যেকোনো পর্যায়ে পুলিশ কমিশনার, জেলার পুলিশ সুপার বা সমমর্যাদার কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন।

২. অব্যাহতিঃ অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে সেই প্রতিবেদন আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনাল) দাখিল করা যাবে। আদালত ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হলে সেই ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন।

৩. পুনরায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগঃ অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি অব্যাহতি পেলেও সেটি চূড়ান্ত নয়।

যদি তদন্ত শেষে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে পুলিশ প্রতিবেদনে (ধারা ১৭৩ অনুযায়ী) তার নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে কোনো বাধা থাকবে না। উল্লিখিত ধারার আওতায় যেসব প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে তা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করতেই মূলত তিনটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রচলিত আইনে মামলা হওয়ার পর তদন্ত করে প্রমাণ পেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ওই ঘটনায় অভিযোগপত্র দাখিল করে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৭৩ ধারায় মামলার তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় পুলিশকে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করতে বলা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।

এতে বেশির ভাগ মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর পর্যন্ত সময় নেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এর বাইরে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী বিভিন্ন মহলের চাপেও তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, মামলার তদন্ত হয় এজাহারে (এফআইআর) থাকা অপরাধের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে। তদন্ত শুরু হলে মামলার এজাহারে নাম থাকা অনেক আসামি সেই অপরাধে জড়িত ছিলেন না বলে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে পুলিশি প্রতিবেদন দেওয়ার আগে তাঁকে দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। আবার পুরো ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে পুলিশও প্রতিবেদন দিতে পারে না। এতে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তির হয়রানির ক্ষেত্র তৈরি হয়। সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা উপেক্ষিত থাকছে। তদন্তে মামলার অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের বিধান যোগ করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর অধিকতর সংশোধন করে প্রণীত অধ্যাদেশ গত ১০ জুলাই গেজেট জারি হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুন ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। ওই দিন বৈঠকের পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সরকারের কিছু জিনিস নিয়ে আমরা নিজেরাই বিব্রত। একটা হচ্ছে ভুয়া বা মিথ্যা মামলা করা; আরেকটা হচ্ছে মামলার ঘটনা সত্যি, কিন্তু সেখানে অনেক লোককে আসামি করে মামলা বাণিজ্য করা। সে জন্য আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিআরপিসিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ চেঞ্জ এনেছি।

আশা করছি, পুলিশ প্রশাসন ও আদালত যেসব মামলায় গ্রেপ্তার বাণিজ্য হচ্ছে, মামলা বাণিজ্য হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে কোনো রকম প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের বিচার শুরুর আগেই মামলার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কেউ যদি ভুয়া মামলা বা হয়রানিমূলক মামলার শিকার হন, তাদের বিচার শুরুর আগেই রেহাই দেওয়া।’

এম.কে
১৯ আগস্ট ২০২৫

আরো পড়ুন

এবার ‘লাল’ হলো সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিমের প্রোফাইল

ফেসবুকে কমেন্টের জেরে সিলেটে এম,সি কলেজে শিবিরের হামলা

ওবায়দুল কাদেরকে ঠাকুরগাঁওয়ের আমন্ত্রণ জানালেন মির্জা ফখরুল