চলতি বছর বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া অনেকটাই বেড়েছে। এ নিয়ে জনমনে বেড়েছে অসন্তোষ, জোর দাবি উঠেছে ভাড়া কমানোর। এ সংক্রান্ত শুনানির শেষে ভাড়া কমানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্টও।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ভাড়া কমানোর দাবি নাকচ করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম। তার ভাষ্য, “বিমান ভাড়া যথাসাধ্য কম ধরা হয়েছে। এরচেয়ে কমানো সম্ভব নয়।”
এরমধ্য দিয়ে কার্যত হাইকোর্টের পরামর্শ ও উপেক্ষা করলেন বিমানের এমডি।
যুক্তি হিসেবে বিমানের এমডি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম ও ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেছে। সৌদিতে বিমানবন্দর ট্যাক্সও বেড়েছে। এছাড়া সারা পৃথিবীতে এভিয়েশন কস্ট প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছর হজযাত্রীদের জন্য এ বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তবে বিমানের এমডির এ বক্তব্যের সঙ্গে বিস্তর ফারাক রয়েছে বাস্তবতার।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, দূরত্বসহ যেকোনো বিচারে অন্য দেশের চেয়ে বিমানের ভাড়া কয়েকগুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বছরের লোকসান মেটাতে ভাড়ার বোঝা হজযাত্রীদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে সংস্থাটি। এতে সৌদি এয়ারলাইন্সও সমান অর্থ নেয়ার সুযোগ পাওয়ায়, রিজার্ভ থেকে চলে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সৌদির জেদ্দার দূরত্ব ১৩ হাজার ৩৯৫ কিলোমিটার। কোথাও না থেমে একটানা যেতে বিমানের সময় লাগে ১৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট। এ মুহূর্তে সেখানে বিমান ভাড়া ১ হাজার ৭০০ ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো। বাংলাদেশের ঢাকা থেকে জেদ্দার দূরত্ব ৫ হাজার ২২৭ কিলোমিটার; একটানা যেতে সময় লাগে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। এক্ষেত্রে বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
নিউইয়র্ক থেকে জেদ্দার দূরত্ব ১০ হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি। নিউইয়র্কের হজ ও ওমরাহ এজেন্সিগুলোর তথ্যমতে, এখন মানুষ ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের বিমানে যাতায়াত বাবদ ভাড়া পড়ছে মাত্র ৭০০-৮০০ ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো।
নিউইয়র্কের মাদানি হজ গ্রুপের প্রধান মাওলানা শহিদুল্লাহ বলেন, ওমরাহর জন্য চলতি মার্চ মাসেও রয়্যাল জর্দানিয়ান এয়ারলাইন্সে বিমান ভাড়া পড়ছে ৭৮০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০ হাজার টাকার কিছু বেশি। এছাড়া, গত বছর হজের সময় নিউইয়র্ক থেকে জেদ্দায় বিমানের যাতায়াত ভাড়া ছিল সৌদি এয়ারলাইন্সে ১,৮০০ ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার মতো।
মাওলানা শহিদুল্লাহ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বিমান কর্তৃপক্ষ যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তা যৌক্তিক নয় বলে মনে করি।’
ভারত থেকে হজের সময় প্রতিবছর প্রায় এক লাখ লোক যান। দেশটি থেকে জেদ্দার দূরত্ব মোটামুটি ৪ হাজার কিলোমিটারের মতো। চলতি বছর দেশটিতে হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া এখনও ঠিক করা হয়নি। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, হজযাত্রীদের যাতায়াত ভাড়া ছিল সরকারি এয়ার ইন্ডিয়ায় মাত্র ৪৫ হাজার রুপি; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫৭ হাজার টাকার মতো। আর বেসরকারি ফ্লাইট এমিরেটসে ছিল ৯৫ হাজার রুপি; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ২১ হাজার টাকার মতো।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়া থেকে হজের সময় প্রতিবছর লাখো লোক সৌদিতে যান। দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে জেদ্দায় আকাশপথের দূরত্ব ৭ হাজার কিলোমিটার। দীর্ঘ এ পথে যাতায়াত বাবদ ভাড়া সৌদি এয়ারলাইন্সের মতো প্রথম সারির এয়ারলাইন্স নিচ্ছে চার হাজার রিঙ্গিত; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ টাকার মতো।
অন্য এয়ারলাইন্সগুলোতে যা ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার রিঙ্গিত; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে।
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে জেদ্দার দূরত্ব ৮ হাজার কিলোমিটার। এত বেশি পথ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে যাতায়াত বাবদ টিকেট ভাড়া এয়ারলাইন্স ভেদে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে।
জার্মানি থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ হজ করতে যান। এছাড়া সৌদি আরবে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা। চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। জার্মানির বার্লিন থেকে সৌদি আরবের জেদ্দার দূরত্ব ৫ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার। আর বাণিজ্যিক রাজধানী ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ৫ হাজার ৪৮০ কিলোমিটার।
বার্লিনের ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, চলতি বছর জার্মানি থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় যাতায়াতে প্রতি হজযাত্রীর খরচ পড়বে ৫৭১ থেকে ৮৫০ ইউরো; বাংলাদেশি টাকায় যা দাঁড়ায় ৬০ হাজার থেকে ৯০ হাজার। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে টিকিটের দাম কিছুটা বেড়েছে।
ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন থেকে জেদ্দার দূরত্ব ৬ হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার। স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, চলতি মৌসুমে হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া হতে পারে সর্বোচ্চ ৭০০ থেকে ৭৫০ ইউরো; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে হজ মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে বিমান ভাড়া থাকে ৬০০ থেকে ৬৫০ ইউরো; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার মতো।