ডাউনিং স্ট্রিট স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে যুক্তরাজ্যের আশ্রয় ও অভিবাসন নীতিতে আসন্ন কঠোর পরিবর্তনগুলোতে লেবার এমপিদের অবশ্যই সমর্থন দিতে হবে। সরকারের ভাষ্যমতে, নতুন নীতি ‘সীমান্ত নিরাপত্তা পুনর্গঠনের নির্বাচনী অঙ্গীকারের’ অংশ, এবং এতে বাধা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই।
আগামী সোমবার হোম সেক্রেটারি শবানা মাহমুদ নতুন অভিবাসন সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন। পরিকল্পনাটিতে ডেনমার্কের কড়াকড়ি মডেল থেকে নেওয়া নীতিগুলো—যেমন পরিবার পুনর্মিলনে সীমাবদ্ধতা এবং অভিবাসীদের পরিস্থিতি উন্নত হলে দেশে ফেরত পাঠানোর বিধান—গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচারকেরা কীভাবে ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস (ECHR) ব্যাখ্যা করবেন, সেটিও বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে ‘দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই’ অভিবাসী প্রত্যাবাসন সহজ হয়।
সরকার দাবি করছে, এই কঠোর পদক্ষেপগুলোই আশ্রয় ব্যবস্থার প্রতি জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায়। একই সঙ্গে রিফর্ম ইউকে-র উত্থান ঠেকাতেও এগুলো প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে তারা। ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, কোনও এমপি যেন এই প্রস্তাব আটকে দেওয়ার চেষ্টা না করেন—এটি ‘সহ্য করা হবে না’।
তবে পরিকল্পনার খসড়া ডানপন্থী গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই লেবারের ভেতর থেকে তীব্র প্রতিবাদ উঠতে শুরু করেছে। এক এমপি বলেছেন, “এটা অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবে মূর্খতাপূর্ণ। মানবপাচারের শিকারদের আংটি-গয়না নেওয়া বা ইউক্রেনীয়দের স্থায়ী হতে না দেওয়ার কথা কি সত্যিই কোনো লেবার সরকার ভাবতে পারে?”
আরেকজন এমপি বলেছেন, রিফর্ম ইউকের ভোট ধরে রাখার এই তাড়াহুড়ো “আতঙ্ক সৃষ্টি করবে, আস্থা নয়”, এবং এটি লেবারের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেউ কেউ এমনও মনে করছেন যে বিতর্কিত নীতিটি কমন্সে পাস হওয়াই কঠিন হবে, বিশেষ করে যারা সাম্প্রতিক নির্বাচনে লিব ডেম ও গ্রিনদের উত্থান দেখে বিপাকে পড়েছেন।
হোম অফিসের মতে, এটি হবে “অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় সংস্কার প্যাকেজ”। ইতোমধ্যে লেবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৪৮,৫৬০ জনকে দেশ থেকে সরানো হয়েছে—যা গত ১৬ মাসের তুলনায় ২৩% বেশি। তারপরও ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছে ১৯%।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় জনমনে অভিবাসন নিয়ে প্রচণ্ড অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং ‘সিস্টেমকে গেমিং’ করার প্রবণতা বাড়ছে। তাদের ভাষায়, কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলে আশ্রয় ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে এবং রিফর্ম ইউকে ক্ষমতায় আসলে সেটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।
তবে লেবারের অনেকে মনে করছেন, এই নীতি প্রগতিশীল ভোটারদের দূরে ঠেলে দেবে এবং গ্রিন পার্টির দিকে ব্যাপক সমর্থন সরিয়ে দেবে। বিশেষ করে জ্যাক পোলানস্কির গ্রিন পার্টির বাড়তি জনপ্রিয়তা এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

