TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে লড়ছেন যারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট বা সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থি ছাত্র সংগঠন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির ছাত্র সংগঠন বাগছাসসহ বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

১. ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খানঃ

ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অন্যতম আলোচিত মুখ। অভ্যুত্থানের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থানরত ছাত্রদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন—“প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না।” এই উক্তি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং তাকে নতুন প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের মধ্যে পরিচিত করে তোলে।

অভ্যুত্থানের পর আবিদুল তার অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামে একটি বই লিখেছেন। বর্তমানে তিনি নিয়মিত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিচ্ছেন, যেখানে তিনি ছাত্ররাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে মতামত দিচ্ছেন। ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী হিসেবে তার প্রার্থিতা তাই দলীয় রাজনীতির বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

২. ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েমঃ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম ডাকসু নির্বাচনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ভিপি পদে লড়ছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। শিবিরের অভ্যন্তরে একজন ত্যাগী ও সাংগঠনিক নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত।

সাম্প্রতিক সময়ে এক আলোচনায় সাদিক কায়েম বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব তৈরি হবে। যে-ই বিজয়ী হোক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানানো হবে।

৩. বাগছাসের আব্দুল কাদেরঃ

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) থেকে ভিপি পদে লড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি।

বাগছাসের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলের নেতৃত্বে থেকে কাদের বলছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে অগ্রাধিকার দেব।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ঘোষিত ৯ দফার কারিগর তিনি।

৪. বাম মোর্চার প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিঃ

‘গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট’-এর নেতৃত্বে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’-এর ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে শামসুন্নাহার হলের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি তখন ক্যাম্পাসে বামপন্থি ছাত্ররাজনীতির মুখপাত্র হিসেবে আলোচিত ছিলেন।

তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ২০১৯ সালের একটি টকশো-ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ওই বক্তব্যে তিনি হাসিনাকে আজীবন ডাকসু সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। বিষয়টি তার বর্তমান অবস্থান ও বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বিতর্ক তৈরি করেছে।

তবুও বাম ছাত্রজোট মনে করছে, ইমি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও সংগঠিত প্রার্থী, যিনি প্রগতিশীল ছাত্রদের হয়ে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন।

৫. স্বতন্ত্র উমামা ফাতেমাঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত বামপন্থি নেতা উমামা ফাতেমা এবার ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’ গড়ে ডাকসু নির্বাচনে লড়ছেন। তিনি একসময় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে উমামার ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি আন্দোলনের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য রেখেছেন এবং মাঠে সক্রিয় থেকেছেন। তবে ৫ আগস্টের পর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নানা অভিযোগে তিনি বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ান। এবার স্বতন্ত্র ঐক্যজোট গড়ে নতুন করে ডাকসুতে নেতৃত্বের লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।

৬. ছাত্র অধিকারের মোল্লা বিন ইয়ামিনঃ

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা বিন ইয়ামিন এবার ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের নির্বাচনী স্লোগান ‘ভোট ফর চেঞ্জ’।

বিন ইয়ামিন এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তার দাবি, ডাকসুকে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি বলেছেন, আমরা চেষ্টা করেছি সব ধরনের শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল দিতে। আগে যেমন ছাত্র অধিকারের জন্য কাজ করেছি, ডাকসুর মাধ্যমেও তা চালিয়ে যেতে চাই।

৭. সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদারঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজার তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে একই হল থেকে জিএস পদে ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তার প্রার্থিতা বিতর্কিত হলেও তিনি প্রথম দিনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আলোচনায় আসেন।

৮. ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইয়াসিন আরাফাতঃ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসিন আরাফাতও ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে তিনি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, ডাকসুর মাধ্যমে আমরা ইসলামী মূল্যবোধ ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণ একসঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

তার প্রার্থিতা ইসলামী ধারার ছাত্রদের মধ্যে প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে।

৯. বাগছাস ছেড়ে ভিপি প্রার্থী জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদঃ

স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ এবার ‘ডিইউ ফার্স্ট’ নামে একটি নতুন প্যানেল ঘোষণা করেছেন। এই প্যানেলে জিএস পদে রয়েছেন মাহিন সরকার।

খালিদ এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় সমন্বয়ক ছিলেন। পরে তিনি এনসিপির ছাত্র সংগঠন বাগছাসে যোগ দেন। এবার নতুন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নিজেকে বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন।

১০. স্বতন্ত্র শামীম হোসেনঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তিনি নিজের ইংরেজি প্ল্যাটফর্ম “Shameem Insight”-এর জন্য পরিচিত।

শামীম দাবি করেছেন, গত কয়েক বছরে তিনি প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়িয়েছেন। আগে সাইফুরস কোচিং সেন্টারের কোর্স সমন্বয়ক ছিলেন। বর্তমানে উচ্চতর ইংরেজি লেখার কোর্স পরিচালনা করছেন, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—ভিপি নির্বাচিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এক বছর বিনামূল্যে ইংরেজি শেখার সুযোগ করে দেবেন।

নির্বাচনী তফশিলঃ

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসুর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল ২০ আগস্ট, প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ আগস্ট এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ২৬ আগস্ট।

এম.কে
২১ আগস্ট ২০২৫

আরো পড়ুন

জগন্নাথপুরে আইইএলটিএস পাস করলেই ১৫-২০ লাখ টাকার ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ে’

সীমান্ত রক্ষায় বিধ্বংসী ট্যাংক কিনছে বাংলাদেশ!

পাচারের অর্থ দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৫ সংস্থার চিঠি

নিউজ ডেস্ক