বাংলা কিশোর সাহিত্যের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম রকিব হাসান। জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ ‘তিন গোয়েন্দা’–এর এই স্রষ্টা আর নেই। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন রকিব হাসান। নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে হতো তাকে। বুধবারও স্বাভাবিকভাবে ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রক্রিয়া চলাকালীন অবস্থায় হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও বিকেল চারটার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রকিব হাসানের দাফন সম্পন্ন হবে রাতেই। তার স্ত্রীর কবরের পাশে দাফনের পরিকল্পনা রয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট সময় ও স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি।
রকিব হাসানের সাহিত্যজীবন শুরু হয় সেবা প্রকাশনী থেকেই। প্রথমদিকে তিনি বিশ্বের বিখ্যাত ক্লাসিক রচনাগুলোর অনুবাদের মাধ্যমে লেখালেখিতে প্রবেশ করেন। এরপর একে একে টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সহ প্রায় চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লিখে তিনি হয়ে ওঠেন পাঠকের প্রিয় লেখক।
তবে তার সবচেয়ে বড় কীর্তি ‘তিন গোয়েন্দা’। রবার্ট আর্থারের ‘দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটরস’ সিরিজ অবলম্বনে লেখা হলেও, রকিব হাসানের কলমে এটি পেয়েছিল সম্পূর্ণ নতুন প্রাণ। তার বর্ণনায় তিন কিশোর গোয়েন্দা কিশোর, রবিন ও মুসা হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের কিশোরদের অনুপ্রেরণা, কল্পনা ও রোমাঞ্চের প্রতীক।
তার অনন্য লেখনশৈলী শুধু কিশোরদের নয়, প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদের মাঝেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে কয়েক প্রজন্মের তরুণ-তরুণীর শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল ‘তিন গোয়েন্দা’।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি রকিব হাসান ব্যবহার করেছেন একাধিক ছদ্মনাম। ‘শামসুদ্দীন নওয়াব’ নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বিখ্যাত রচনাগুলো, যা পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরে সাহিত্য অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোক। পাঠক সমাজ বলছে, তার প্রয়াণে শুধু একজন লেখক নয়, হারিয়ে গেল এক প্রজন্মের শৈশব স্মৃতি, কল্পনার জগৎ এবং স্বপ্ন দেখার সাহস জাগানো এক অনন্য সৃষ্টিশীল মন।
সূত্রঃ প্রথম আলো
এম.কে
১৫ অক্টোবর ২০২৫