ব্রিটেনজুড়ে ক্রমবর্ধমান গ্রীষ্মের গরম শুধু অস্বস্তিকরই নয়, বরং মানুষের স্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা এবং মানসিক স্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এক রিপোর্টে দ্য টাইমস জানিয়েছে—তাপ আমাদের “ধীর ও বোকা” করে তোলে, আর এখনই সময় এসিকে (Air Conditioner) বিলাসিতা নয়, একটি প্রয়োজনীয় নাগরিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করার।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ঘরের তাপমাত্রা ঘুমের মান কমিয়ে দেয়, এবং ৩০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা হলে হৃদযন্ত্রজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে ইউরোপে গরমে মারা যায় ৬০,০০০ মানুষ। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৭০-এর দশকে এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যে ৫০ গুণ বেড়ে যেতে পারে।
ব্রিটিশ ঘরবাড়ি মূলত শীত মোকাবেলার জন্য নির্মিত। তাদের দেয়াল, ছাদ ও জানালার কাঠামো এমনভাবে তৈরি, যা তাপ আটকে রাখে। ফলে গ্রীষ্মকালে ঘরের ভিতর যেন তাপমাত্রা আটকে যায়, অনেকটা ওভেনের মতো। ইতালিতে যেখানে ৬১% এবং জাপানে ৮৪% ঘরে এসি রয়েছে, সেখানে ব্রিটেনে এই হার ২০%-এরও কম।
বর্তমান নির্মাণবিধি এবং স্থানীয় নীতিমালাগুলো এসি ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। ‘পার্ট–O’ (Part O) নামের এক বিধি অনুযায়ী, নতুন বাসাবাড়িতে এসি বসানোতে নানা রকম বাধা আছে। যদিও রিভার্সিবল হিট-পাম্প বা হাইব্রিড এসি সিস্টেম জাপানে নরমালি অনুমোদিত, ব্রিটেনে তা এখনো সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে।
তীব্র গরম শুধু অস্বস্তি কারণই নয়—এটি যুক্তরাজ্যের উৎপাদনশীলতাও হ্রাস করছে। শিক্ষার্থীদের শেখার গতি, অফিসে কর্মদক্ষতা এবং বার্ধক্যে মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা এই উচ্চ তাপমাত্রায় বিপন্ন হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সময় জাতীয়ভাবে চিন্তা করার। সরকার চাইলে £৭,৫০০ হিট পাম্প ভর্তুকির আওতায় ‘স্প্লিট সিস্টেম’ এসিগুলো যুক্ত করতে পারে। একই সঙ্গে বিদ্যমান আইনগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় ঘরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ২৬°C-এর বেশি থাকে।
সরকার ইতোমধ্যেই ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নানা পরিকল্পনা করছে, তবে এসির মতো মৌলিক ও বাস্তব প্রয়োজনীয়তাকে এখনও জাতীয় নীতিতে স্থান দেওয়া হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গ্রীষ্মে যেমন তাপমাত্রা আরও বাড়ছে, তেমনি জনগণের চাপও বাড়ছে। তাই ব্রিটেনের উচিত এখনই আধুনিক ‘কুলিং স্ট্র্যাটেজি’ গ্রহণ করা, যাতে নাগরিকরা ঘরে, কর্মস্থলে এবং হাসপাতালগুলোতে নিরাপদে থাকতে পারে।
উন্নত দেশ হিসেবে ব্রিটেন আর গরমকে অবহেলা করতে পারে না। এসি আর বিলাসিতা নয়, এটি এখন একটি বাস্তব জীবনরক্ষাকারী প্রযুক্তি। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, উৎপাদনশীলতা এবং ভবিষ্যৎ জলবায়ু নীতির কথা মাথায় রেখে, সরকার ও সমাজকে এখনই এসিকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
সূত্রঃ দ্য টাইমস
এম.কে
১৪ জুলাই ২০২৫