4.5 C
London
December 17, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

নতুন উত্তেজনাঃ শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় সংকট

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বছরের আন্দোলনে দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে দীর্ঘ বিচার শেষে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ছাত্রনেতা-নির্যাতিত পরিবারসহ বহু নাগরিক রায়কে স্বাগত জানিয়ে ঢাকায় তার ফাঁসি কার্যকরের দাবি তুলেছে।

২০২৪ সালের আগস্টে গণআন্দোলনে চাপে পড়ে হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা তার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করলে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে হেলিকপ্টারে করে দিল্লিতে নিয়ে যায়। তিনি এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশ সরকার ভারতকে প্রত্যর্পণ চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেছে, হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার “বাধ্যবাধকতা” দিল্লির রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে “বন্ধুত্বহীন আচরণ” বলে আখ্যা দিয়ে দ্রুত ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে।

তবে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি ধারা আছে যেখানে “রাজনৈতিক প্রকৃতির অপরাধে” প্রত্যর্পণ বাধ্যতামূলক নয়। ভারতের ধারণা, বর্তমান সরকারের বিচারিক পদক্ষেপ “রাজনৈতিক প্রতিশোধ” হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই দিল্লি তাকে হস্তান্তর করতে আগ্রহী নয়।

ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “নয়াদিল্লি কীভাবে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে? তিনি ভারতের পুরনো মিত্র।” ভারতের কাছে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও ঐতিহাসিক—১৯৭৫ সালে পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর তিনিই দিল্লিতে দীর্ঘ বছর নির্বাসনে ছিলেন।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের ওপর বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করায় দুই দেশের সম্পর্ক এখন টানাপোড়েনে রয়েছে। আন্দোলনের নেতারা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন যে ভারত হাসিনাকে অতিরিক্ত সমর্থন দিয়েছিল, যা বাংলাদেশের গণআন্দোলনকে দুর্বল করেছিল।

অন্যদিকে ভারত বলছে, তারা বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র চায়। দিল্লির মতে, নির্বাচন হলে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করা সহজ হবে, কারণ বর্তমান উত্তেজনা টেকসই নয়।

ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য, সীমান্ত ও সাংস্কৃতিক বন্ধন গভীর হলেও হাসিনার আশ্রয়ের বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্ককে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় নিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মত, ভারত তাকে ফিরিয়ে দেবে—এমন সম্ভাবনা বাস্তবে খুবই কম, কারণ দিল্লি বিষয়টিকে “নৈতিক দায়বদ্ধতা” হিসেবেও দেখছে।

একই সঙ্গে বিশ্লেষকদের মতে, বংশগত দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারে—এই সম্ভাবনাও ভারত মাথায় রাখছে। ফলে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্দেশ্যে ফেরত দেওয়া ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সূত্রঃ আল জাজিরা

এম.কে

আরো পড়ুন

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে উত্তেজনা, বিএসএফ জওয়ানের আঙুল কাটলেন বাংলাদেশি কৃষক

উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পুর্নবণ্টন, কে কোন মন্ত্রণালয় পেলেন

শেখ হাসিনার পতন কেবল ছাত্র আন্দোলনের কারণে হয়নি