26.8 C
London
June 17, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

নির্দোষ হলে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেনঃ টিউলিপকে দুদক চেয়ারম্যান

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক নির্দোষ হলে তিনি কেন মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। “কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি পরিচয় নেওয়া—এটা প্রশ্নবিদ্ধ,” বলেন তিনি।

সোমবার বিকালে ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে।

মোমেন বলেন, “টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে, তার আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি লিখলেন কেন? আর যদি কিছুই না জানেন, তাহলে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন?”

দুদক এই ব্রিটিশ এমপিকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করছে তুলে ধরে সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “টিউলিপ আমাদের তিনটি মামলায় অভিযুক্ত এবং আরও একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আজকে একটি পত্রিকায় এসেছে—২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশে একটি মাছের খামার থেকে ৯ লাখ টাকা আয় করেছিলেন।

“যেহেতু এটি তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ রয়েছে, তাই তিনি যতই বলুন না কেন-‘আমি ব্রিটিশ নাগরিক’, কাগজপত্র অনুযায়ী তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করা হবে। কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি পরিচয় নেওয়া—এটা প্রশ্নবিদ্ধ।”

মোমেন বলেন, “যদিও তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তাকে সাক্ষাৎ দেননি এবং প্রধান উপদেষ্টা যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন সেটা হয়নি। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির এমন সাক্ষাতের সুযোগ নেই।”

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “সঠিক ঠিকানায় টিউলিপের নামে তলবি নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। রাজউকের প্লট, গুলশানে প্লট বরাদ্দে অনিয়মসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে।

“তার আয়কর রিটার্ন ঘেঁটে দেখা গেছে, হঠাৎ করে তার স্বর্ণের পরিমাণ ১০ ভরি থেকে বেড়ে ৩০ ভরি হয়ে গেছে, অথচ এর দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি।”

তিনি বলেন, “টিউলিপ যতই বলুন ‘আমি কিছুই জানি না’, তাহলে মন্ত্রিত্ব গেল কেন? আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি লিখবেন কেন? যদি তিনি দেশে আসেন এবং আইনি সহায়তা প্রয়োজন হয়, আমরা প্রস্তুত আছি।

“তবে তাকে আমাদের আইনের আওতায় আদালতে মোকাবিলা করতে হবে—এই বার্তাই আমরা তার আইনজীবীকে জানিয়েছি।”

মোমেন বলেন, “আমরা পদ্ধতিগতভাবে তার কাছে চিঠি, সমন, ওয়ারেন্ট পাঠাচ্ছি। প্রয়োজনে পত্রিকাতেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করার আশায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে তার সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন টিউলিপ।

আর সেজন্য ইউনূসকে হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্নভোজ বা বিকেলের চা পানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

৪ জুন পাঠানো এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “আমি আশা করি এই বৈঠকের মাধ্যমে ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করা সম্ভব হবে—যার মাধ্যমে আমার খালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।”

৯ জুন যুক্তরাজ্য সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এ সাক্ষাতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার সরকারি এ সফরের তৃতীয় দিন ইউনূস ওয়েস্টমিনস্টারে হাউস অব কমেন্সে গিয়ে স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তবে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের চায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।

এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ইউনূস বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিককে তিনি সাক্ষাৎ দেবেন না। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।

এরপর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠজনদের দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়।

এরমধ্যে তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক রয়েছেন। তার মা শেখ রেহানাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন লেবার এমপি টিউলিপ।

তিনি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি।

ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

স্টারমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত টিউলিপের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে টিউলিপ কোনো ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন।

ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে দুদক।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড থেকে ৭১ নম্বর রোডের ১১এ, ১১বি ফ্ল্যাটটি (পুরনো ঠিকানা- ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি) কোনো টাকা পরিশোধ না করেই তিনি নিয়েছেন। রেজিস্ট্রির মাধ্যমে মালিকানা গ্রহণে টিউলিপকে ‘সহযোগিতা করা হয়েছে’ বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

টিউলিপ ছাড়াও রাজউকের দুই কর্মকর্তাকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের ‘যোগসাজশে’ এবং ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে ‘অবৈধ সুবিধা’ নেওয়ার অভিযোগ করা হয় সেখানে।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

দুদক ‘প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ সাবেক ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর কথা বললেও কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন না করে এবং যোগাযোগের চেষ্টায় ‘সাড়া না দিয়ে’ দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থা ‘ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এই লেবার এমপির আইনজীবীরা।

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের মামলায় শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় ১৫ এপ্রিল তার আইনজীবীদের এক চিঠিতে এমন অভিযোগ তোলা হয়।

সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এম.কে
১৭ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

সুখ নেই যুক্তরাজ্যে- একটি গবেষণা প্রতিবেদনে রিপোর্ট

যুক্তরাজ্যে যৌন নির্যাতনের ধামাচাপা ইতিহাস উন্মোচিত হতে যাচ্ছে

ব্রিটেনে খাদ্য সরবরাহ সংকট চরমে: বন্ধ হচ্ছে রেস্তোরাঁ