TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর

নেপাল থেকে ভারতঃ আন্দোলনের ডমিনো ইফেক্ট, দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে

‘ভগবান রামের জন্ম নেপালে’—অপসারণের পরও ভারতবিরোধী অবস্থান বজায় রাখলেন কেপি শর্মা ওলি

নেপালের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বলেছেন, সীমান্ত বিরোধ ও ভগবান রামের জন্মস্থান প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার কারণেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, “অযোধ্যায় রামের জন্ম হয়নি, নেপালেই রামের জন্মস্থান।” পাশাপাশি লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরাকে নেপালের অংশ দাবি করায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে।

দেশত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে ওলি জানান, তিনি বর্তমানে কাঠমান্ডুর উত্তরে সেনাবাহিনীর শিবপুরী ব্যারাকে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করা বা সহিংস বিক্ষোভ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে তিনি ফের ভারতবিরোধী অবস্থান নেন। তার ভাষায়, “যদি লিম্পিয়াধুরাসহ নেপালের মানচিত্র জাতিসংঘে না পাঠাতাম, কিংবা ভগবান রামের জন্ম নেপালে বলার দাবি না তুলতাম, তবে আমি সুবিধা পেতে পারতাম। কিন্তু নীতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থকে আমি সবসময় প্রাধান্য দিয়েছি।”

এদিকে, নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের পর শুরু হওয়া তরুণদের আন্দোলন ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হন। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, প্রেসিডেন্টের বাড়িসহ একাধিক সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝলানাথ খনালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকার নিজ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান। পুলিশ জানায়, বিক্ষোভ চলাকালে দেশজুড়ে ১৩,৫০০-এরও বেশি বন্দি কারাগার ভেঙে পালিয়েছে।

সংকটের সূচনা হয় ৪ সেপ্টেম্বর, যখন সরকার হঠাৎ ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতি, বৈষম্য ও জবাবদিহির অভাবের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম রাজপথে নামে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আন্দোলনটিকে ‘জেন জি প্রোটেস্ট’ বা ‘জেন জি রেভোলিউশন’ নাম দিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় এবার ভারতও উত্তাল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিহারে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের আন্দোলনে রাজপথ অচল হয়ে পড়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর পাটনায় তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের বাসভবনের উদ্দেশ্যে মিছিল করেন। কেতন মার্কেট, বকরগঞ্জ, গান্ধী ময়দান ও ডাকবাংলো স্কয়ারে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিলে শহরের প্রধান সড়কগুলো অচল হয়ে যায়। চাকরিপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে শূন্যপদ কমিয়ে তাদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করা হচ্ছে।

মোদি প্রশাসন এমনিতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনে রয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য নতুন চাপে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী মত দমন করায় সেনাবাহিনীর ভেতরেও অসন্তোষ বাড়ছে। এমনকি সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটে মাহিন্দা রাজাপক্ষের পতন, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ ইস্যুতে অলির ক্ষমতাচ্যুতি—এসব ঘটনার পর এবার ভারতের তরুণ প্রজন্মও রাজপথে নেমে পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এই ডমিনো ইফেক্ট আরও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এখন প্রশ্ন একটাই—দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের মতো কি এবার ভারতের নেতৃত্বেও আসছে বড় পরিবর্তন?

সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া

এম.কে
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

তামিমের জায়গা কি হচ্ছে না বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে

ব্রেক্সিট ভুল ছিল বলা লোকের সংখ্যা বাড়ছেঃ জরিপ

ট্রাম্পের টার্গেট ইউক্রেন, কমলার গাজা