TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

পন্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের

নিউইয়র্কে বসবাসরত শিখ অধিকারকর্মী গুলপ্যাটওয়ান্ট সিং পন্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW)-এর এক কর্মকর্তা ও দিল্লিভিত্তিক এক সহযোগীর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রসিকিউটররা আদালতে বলেছেন, পন্নুনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি “চুক্তিভিত্তিক হত্যা অভিযান” পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছিল।

পন্নুন ছিলেন খালিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা, যার লক্ষ্য স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠন। ভারত সরকার এই আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখছে, এবং পন্নুনসহ অনেককে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত করেছে। তবে মার্কিন নাগরিক হওয়ায় পন্নুন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তভাবে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন — প্রতিবাদ মিছিল, মানবাধিকার প্রচারণা ও সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া।

আইনি নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের বসন্তে পন্নুনের উপর গোপনে নজরদারি শুরু হয়। কুইনসে তার আইনফির্ম, বাড়ি, জিম ও ক্যাফের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার দৈনন্দিন রুটিন। নজরদারি দলের সদস্যরা তার ছবি তোলে, গাড়িতে ওঠা-নামা এবং ব্যায়ামের পর বিশ্রামের সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করত।

এদিকে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিখিল গুপ্তা নামের এক ব্যক্তি RAW-এর একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন। আইনি নথিতে বলা হয়েছে, গুপ্তা ছিলেন মধ্যম-স্তরের এক ব্যবসায়ী, যার ড্রাগ ট্রেডের সঙ্গে সংযোগ ছিল। তথ্যমতে জানা যায়, RAW কর্মকর্তা তাকে প্রস্তাব দেন— তার বিরুদ্ধে থাকা এক অপরাধমূলক মামলা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যদি তিনি বিদেশে একটি সংবেদনশীল “সমস্যা” সমাধানে সাহায্য করেন। কর্মকর্তার আশ্বাস ছিল, “এরপর কেউ তোমাকে আর বিরক্ত করবে না।”

এই “সমস্যা” ছিল পন্নুনকে চুপ করানো। ২০২৩ সালের মে মাসের শেষ দিকে গুপ্তা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এক যোগাযোগের মাধ্যমে একজন ভাড়াটে খুনি খুঁজতে শুরু করেন। নথি অনুসারে, তিনি ফোনে বলেন, “ফিনিশ হিম, ব্রাদার, ফিনিশ হিম, বেশি সময় নিও না।” শিগগিরই গুপ্তা পন্নুনের দৈনন্দিন জীবনের ছবি পেতে শুরু করেন এবং সেগুলো RAW কর্মকর্তাকে পাঠাতে থাকেন।

আদালতের নথিতে উল্লেখ আছে, গুপ্তা তার হ্যান্ডলারকে জানাতেন যে কাজটি দ্রুত শেষ করতে হবে। এক টেক্সটে তিনি লিখেছিলেন, “NY গ্রুপের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের বলেছি তারা যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করুক।”

মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, এটি শুধু একটি হত্যার চেষ্টাই নয়, বরং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা মার্কিন মাটিতে পরিচালিত গোপন হত্যা ষড়যন্ত্র, যা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, “মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে বিদেশি সরকারের মদতে হত্যা ষড়যন্ত্র একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
মামলাটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে বিচারাধীন, এবং তদন্তকারীরা RAW-এর কর্মকর্তার পরিচয় ও ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন।

সূত্রঃ ব্লুমবার্গ

এম.কে

আরো পড়ুন

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দেবে জাতিসংঘ

ঘোড়ায় চেপে স্পেন থেকে পবিত্র হজ পালনে মক্কার পথে ৩ বন্ধু

সংঘাত বন্ধ না করলে ভারত-পাকিস্তানের ওপর ২৫০ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়েছিলামঃ ট্রাম্প