6.2 C
London
October 30, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

‘পরিবার নয়, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ জনগণের হাতে’—রয়টার্স ও ইন্ডিপেন্ডেন্টকে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবারের ওপর নির্ভর করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত থেকে রয়টার্স ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-কে দেওয়া পৃথক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া ‘শুধু অন্যায় নয়, বরং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’।

গত বছরের ৫ আগস্ট দেশত্যাগের পর এই প্রথম তিনি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আমাদের সমর্থকদের অন্য কোনো দলকে সমর্থন করতে বলছি না। কিন্তু কোটি কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের ভোটার—তাদের নির্বাচনের বাইরে রাখা কার্যকর গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”

রয়টার্স জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। সেই সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নির্বাসন থেকে শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আমি দেশে ফিরব, কেবল যদি সরকার বৈধ হয়, সংবিধান কার্যকর থাকে এবং আইন-শৃঙ্খলা সত্যিকার অর্থে বজায় থাকে।” তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে সরকারে থাকুক বা বিরোধীদলে, তা পরিবারের ওপর নির্ভর করবে না। কোনো এক ব্যক্তি বা পরিবার বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।”

নিজের উত্তরাধিকারের প্রশ্নে হাসিনা বলেন, “আমি চাই, মানুষ আমাকে সেই নেতা হিসেবে মনে রাখুক যিনি ৯০–এর দশকে সামরিক শাসনের পর দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সাহায্য করেছিলেন।”

ব্রিটিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ছাত্রদের নেতৃত্বে গত বছরের বিক্ষোভে নিহতদের বিষয়ে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান। তার ভাষায়, “আমি আমাদের প্রতিটি সন্তান, ভাই, বোন ও বন্ধুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি, তবে আমি কখনো পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিইনি।”

তিনি দাবি করেন, আন্দোলনের সময় বেশির ভাগ হতাহতের কারণ ছিল মাঠ পর্যায়ের নিরাপত্তা বাহিনীর ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’। “আমি একজন নেতা হিসেবে সার্বিক দায় স্বীকার করি, কিন্তু গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছি—এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, “১৫ বছর লৌহ মুষ্টিতে দেশ শাসন করা শেখ হাসিনা এখন ভারতের নির্বাসনে রয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তার দলকে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনের বাইরে রাখা হচ্ছে।”

দেশত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছিলাম বাধ্য হয়ে। দেশে থাকলে শুধু আমার নয়, আমার আশপাশের মানুষের জীবনও বিপন্ন হতো।” তিনি আরও যোগ করেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও আমি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শুধু মুক্ত, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই বাংলাদেশকে সুস্থ করবে।”

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হন—যা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত। শেখ হাসিনা এই সংখ্যাকে “অতিরঞ্জিত” বলে উল্লেখ করে বলেন, “সরকারের পদক্ষেপ ছিল সৎ উদ্দেশ্যে—প্রাণহানি কমাতে।”

অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, তবে তাতে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না।

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে

আরো পড়ুন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযুক্তরা দায়মুক্তি পাচ্ছেনঃ আসিফ নজরুল

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে তবুও খোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রাজনীতির শ্বাসরুদ্ধকর এক বৈঠকে তারেক রহমান-ড. ইউনুস