TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

পশ্চিমা দেশে গণতন্ত্রে আস্থা সংকট: ইপসস জরিপে চরম অসন্তুষ্টি ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা

পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান দেশগুলোতে গণতন্ত্র নিয়ে জনসন্তুষ্টি বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে—ইপসসের এক বিস্তৃত জরিপে উঠে এসেছে এমনই উদ্বেগজনক চিত্র। নয়টি দেশের মধ্যে আটটিতেই গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টির হার ৫০ শতাংশের নিচে, আর সুইডেন ছাড়া সব দেশেই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ।

ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে মোট প্রায় ১০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে—জনগণের বড় অংশ মনে করে গণতন্ত্র বাস্তবে যেভাবে কাজ করছে তাতে পদ্ধতির প্রতি আস্থা কমছে। যুক্তরাজ্য রাজনীতির ইপসস পরিচালক গিডিয়ন স্কিনার বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি মানুষের সমর্থন এখনও শক্তিশালী থাকলেও বাস্তবচিত্রে তারা হতাশ এবং ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত বলে মনে করছে।

ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টি সবচেয়ে তীব্র, যেখানে সরকার পতনের পর পরিস্থিতি আরও নেতিবাচক হয়েছে। ফ্রান্সে ৮১% এবং নেদারল্যান্ডসে ৭৬% অংশগ্রহণকারী মনে করেন গণতন্ত্রের অবস্থা গত পাঁচ বছরে খারাপ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যেও একই ধ trend দেখা গেছে।

সন্তুষ্টির হারও জাতিভেদে উদ্বেগজনকভাবে কম: ক্রোয়েশিয়ায় ১৮%, ফ্রান্সে ১৯%, যুক্তরাষ্ট্রে ২০%, যুক্তরাজ্যে ২৬%, স্পেনে ২৭% এবং ইতালিতে ২৯% মানুষ গণতন্ত্রের কার্যকারিতায় সন্তুষ্ট। নেদারল্যান্ডসে মতভেদ সমানভাবে বিভক্ত হলেও সুইডেন একমাত্র দেশ যেখানে ৬৫% মানুষ বর্তমান গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্ট।

আগামী পাঁচ বছরে গণতন্ত্র আরও দুর্বল হবে বলে আশঙ্কা করছে সুইডেন ছাড়া বাকি সব দেশের মানুষ। ফ্রান্সে এই উদ্বেগ ৮৬%, স্পেনে ৮০%, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫%, আর যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯%—যা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার ভবিষ্যৎ-সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

জরিপে উঠে এসেছে গণতন্ত্রের প্রধান হুমকিগুলোর তালিকাও—ভুয়া খবর, রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, উগ্রবাদ ও দুর্নীতি। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ডে ভুয়া খবরকেই সবচেয়ে বড় বিপদ বলে মনে করছে মানুষ। অন্যদিকে দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতি সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

সমাধান হিসেবে জরিপ অংশগ্রহণকারীরা প্রধানত কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষার উন্নয়ন এবং আদালতের স্বাধীনতা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মনে করে বর্তমান ব্যবস্থা ধনীদের জন্য সুবিধাজনক, ফলে “মূলগত পরিবর্তন” এখন জরুরি। এই পরিবর্তনের দাবি সবচেয়ে বেশি ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, পোল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে।

তবে পরিবর্তনের পাশাপাশি ঐকমত্য গড়তে সক্ষম রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থাই সবচেয়ে বেশি—যা অনেক দেশেই রাজনৈতিক বিভাজনের সময়েও জনগণের এক ধরনের যৌথ প্রত্যাশা প্রতিফলিত করে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ভিসা রিনিউয়ের ক্ষেত্রে নতুন বেতনের প্রান্তিকতা প্রদর্শন কর‍তে হবে নাঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাইফুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ব্রিটিশ এমপির চিঠি

যুক্তরাজ্যে আশ্রয় হোটেল আশ্রয় নয় যেন আতঙ্কঃ অভিবাসী হোটেলগুলোতে বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা