18.3 C
London
September 17, 2025
TV3 BANGLA
সিলেট

সিলেটে ‘পাখির মাংসে’ কাউন্সিলরদের ভূরিভোজ, ফেসবুকে লাইভ

একটি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খেতে বসেছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের পাঁচ ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেটি সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) করা হয়। সেখানে দেখানো হয় কোন পাত্রে কোন পাখির মাংস রয়েছে। ওই মাংস দিয়েই চলছিল কাউন্সিলরদের ভূরিভোজ। যদিও আইন বলছে, যেকোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখি বা মাংস ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ।

ঘটনাটি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর পরগনার একটি রেস্তোরাঁর।

 

প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে শিকার করা পাখি জবাই করে এ ভূরিভোজে অংশ নিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মুহিত জাবেদ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রায়হান আহমদ ছিলেন।

 

ফেসবুকে দেখা গেছে, শুক্রবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে রায়হান আহমদ তার ফেসবুক আইডি থেকে ‘লাইভে’ আসেন। ২ মিনিট ৯ সেকেন্ডের এ ভিডিওতে দেখা যায়, হরিপুরের একটি রেস্তোরাঁর নাম উল্লেখ করে পাখির মাংস রান্না করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় লাইভের বর্ণনায় সদ্য শিকার করা ডাহুক, বক, বালিহাঁস জবাই করে রান্না করার কথাও বলা হয়। এরপর গরম পাতে তা পরিবেশন করে খাবার খেতে খেতে বর্ণনা দেওয়া হয়। তরতাজা পাখির মাংস খেতে চাইলে রেস্তোরাঁয় মানুষজনকে আসার আহ্বান জানানো হয়। খেতে খেতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মতামত নেওয়া হয়।

 

তবে শনিবার দুপুর ১২টার পর রায়হানের ফেসবুক থেকে ভিডিওটি মুছে দিতে দেখা গেছে।

 

ভিডিওতে পাখির মাংস খাওয়ার বর্ণনা করা হলেও শনিবার (১২ ডিসেম্বর) ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন দাবি করেন, তারা মাংস দিয়ে খেয়েছেন ঠিক, কিন্তু পাখির মাংস ছিল কি না, নিশ্চিত নন। আর ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করা রায়হান আহমদ বলেন, সব হাঁসের মাংস ছিল, তিনি না জেনে পাখির মাংস বলেছিলেন।

 

কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন বলেন, ওই এলাকায় তারা একটি বিশেষ কাজে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে ক্ষুধার্ত হয়ে রাস্তার পাশের ওই রেস্তোরাঁয় ভাত খেয়েছেন। তিনি খাসির মাংস দিয়ে খেয়েছেন। ভিডিওতে সব মাংস পাখির উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যে ভিডিও করেছে, মনে হয় সে খেয়েছে।

 

বাংলাদেশের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখি বা মাংস ক্রয়-বিক্রয় অপরাধ এবং এতে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ আইনের তফসিল অনুযায়ী দেশের স্থানীয় বন্য পাখি ধলাবুক ডাহুক, বক ও বালিহাঁস নিষিদ্ধ পাখির অন্তর্ভুক্ত।

 

বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন বলেন, তারা সুনির্দ্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন। হরিপুরে রেস্তোরাঁয় পাখি শিকার করে এভাবে মাংস রান্না করে কেনাবেচার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ভূরিভোজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি। তাদের অবশ্যই আইন মান্যকারী হওয়া উচিত। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। তারা যদি আইন অমান্য করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

প্রথম আলোর খবরে আরও উল্লেখ করা হয়, জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার সিলেট-তামাবিল হাইওয়েতে অবস্থিত এবং এখানের তারু মিয়া হোটেল, পুরোনো ড্রাইভার হোটেল, বিসমিল্লাহ হোটেলসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁয় অবাধে বিক্রি হয় বন্য ও অতিথি পাখি এমন খোঁজ পাওয়া গেছে।

 

১৩ ডিসেম্বর ২০২০
সূত্র: প্রথম আলো

আরো পড়ুন

অবশেষে সিলেটের শত কোটি টাকার বাড়ির রহস্য উদ্ধার

রায়হান হত্যা: এসআই আকবরসহ ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে চার্জশিট

২০২০ সালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর প্যারিস

অনলাইন ডেস্ক