নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে এক বিরল সাফল্য অর্জন করলেন—তা নিয়ে মুখ খুলেছেন তার বাবা, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অধ্যাপক ও পোস্ট-কলোনিয়াল স্কলার মাহমুদ মামদানি। আল–জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার প্রশ্ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শ তার ছেলের প্রচারণায় সবচেয়ে বড় প্রেরণা হয়ে কাজ করেছে।
মাহমুদ মামদানি বলেন, জোহরানের অবস্থান কখনোই আপসকামী ছিল না। ইসরায়েলের প্যালেস্টিনিদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন নীরবতা প্রচলিত, তখন জোহরান প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জানান, “প্যালেস্টিনিদের অধিকার ছিল তার হৃদয়ের খুব কাছের—এটা সে কখনোই বিক্রি করেনি বা কম গুরুত্ব দেয়নি।”
গত জুনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে অপ্রত্যাশিতভাবে শীর্ষে উঠে আসেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই তরুণ নেতা। চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে হারান। নভেম্বরের মূল নির্বাচনে কুওমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও, জোহরান আবারও বড় ব্যবধানে তাকে পরাজিত করেন।
জোহরানের এই সাফল্য তার পরিবারকেও বিস্মিত করেছে বলে জানান মাহমুদ মামদানি। তিনি বলেন, “সে প্রচারণায় নেমেছিল জেতার জন্য নয়—বরং একটি বক্তব্য দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার দৃঢ়তা, অধ্যবসায় এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষমতা তাকে এগিয়ে নিয়েছে।” শৈশব থেকে বহু প্রজন্মের সদস্যদের সঙ্গে বসবাস করায় তার সামাজিক দক্ষতা ও ধৈর্য তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
নিউইয়র্কে এবারের মেয়র নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি গত পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। মাহমুদ মামদানির মতে, তরুণ ভোটার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণই এই পরিবর্তনের মূল শক্তি। মুসলিম এবং নতুন অভিবাসী জনগোষ্ঠী যাদের এতদিন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছিল—জোহরান তাদের আত্মবিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেছেন।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরের সহিংসতার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের জনমত বদলাতে শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেন মাহমুদ। তিনি বলেন, “গাজার প্রভাব শুধু অঞ্চলিক নয়—এটি বৈশ্বিক। বিশ্ব আর কখনোই বিশ্বাস করবে না যে ইসরায়েল যা করছে তা শুধু আত্মরক্ষা।” তিনি আরও জানান, অর্থকেন্দ্রিক রাজনীতির শক্তির বিরুদ্ধেও জোহরানের বিজয় “টাকা–নির্ভর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা” প্রকাশ করেছে।
মেয়র হিসেবে জোহরানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন মাহমুদ মামদানি। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, তার মেয়াদকালই প্রমাণ করবে—নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারে কি না।
সূত্রঃ আল জাজিরা
এম.কে

