তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে এক ফাঁস হওয়া অডিও কল থেকে যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি।
১৮ জুলাই ২০২৪ সালে রেকর্ড করা কলটিতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “যেখানেই তাদের পাবে, গুলি করবে।” অডিওটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা এনটিএমসি রেকর্ড করেছিল এবং মার্চে এটি অনলাইনে ফাঁস হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক অডিও বিশ্লেষক সংস্থা Earshot অডিওটির সত্যতা স্বীকৃতি দিয়েছে।
জাতিসংঘের তদন্ত অনুযায়ী, গত বছর আন্দোলনের সময় প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন। এই ঘটনাগুলোর জন্য শেখ হাসিনা বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিতিতে তার বিচার শুরু হয়েছে।
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের কোটা বাতিলের দাবিতে, যা পরবর্তীতে গণআন্দোলনে রূপ নেয় এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হয় ৫ আগস্ট, যেদিন তিনি হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান এবং গণভবনে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা।
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট পুলিশের নির্বিচার গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতার ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ওই সময় সেনাবাহিনী এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়।
বিবিসি শত শত ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজ ও নথি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের টার্গেট করে গুলি চালায়। পাল্টা আক্রমণে ছয়জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন এবং যাত্রাবাড়ী থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে, তৎকালীন বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছিলেন এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, অডিওর সত্যতা নিশ্চিত নয় এবং দলীয় নেতারা ব্যক্তিগতভাবে সহিংসতা পরিচালনা বা নির্দেশ দিয়েছেন—এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে বিবিসির মতে, এই কলটি হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনার প্রমাণ বহন করে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম প্রধান উপাদান।
ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা এখনো নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। বাংলাদেশ সরকার তার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানালেও, ভারত এখনও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৯ জুলাই ২০২৫