ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে আবারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। একটি ডিঙি নৌকা থেকে পড়ে এক কিশোর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে, আরেকটি নৌকায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই সোমালি নারী। চলতি বছর এই সমুদ্রপথে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হলো।
ফরাসি প্রসিকিউটর সেসিল গ্রেসিয়ার জানান, রবিবার সকালে বুলোন-সুর-মের শহরের দক্ষিণে একো সৈকতে শিশুটির লাশ ভেসে আসে। শিশুটির বয়স ও জাতীয়তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।
এর আগের দিন শনিবার নুফশাতেল-হারদেলো উপকূলে অতিরিক্ত ভিড় করা আরেকটি ডিঙি নৌকায় প্রাণ হারান দুই সোমালি নারী। ধারণা করা হচ্ছে, তারা হয়তো নৌকার নিচে চাপা পড়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অথবা নৌকা ভেঙে সমুদ্রে ডুবে মারা যান।
জরুরি সেবার কমান্ডার জনাথন কারুসো জানান, শিশুটি যে নৌকায় ছিলেন, সেখান থেকে ৪৮ জন অভিবাসী সমুদ্রে পড়ে গিয়েছিলেন এবং তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু নৌকাটিতে তখনও প্রায় ৫০ জন ছিলেন, যারা যাত্রা অব্যাহত রেখে ইংল্যান্ডের দিকে অগ্রসর হয়।
শনিবার অনুকূল আবহাওয়ায় প্রায় ৯০০ অভিবাসী চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন বলে ধারণা করছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩২,০০০–এর বেশি অবৈধ অভিবাসী ব্রিটেনে প্রবেশ করেছে, যা ২০২২ সালের রেকর্ডের সমান। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইতোমধ্যেই ৫০,০০০–এর বেশি মানুষ এই বিপজ্জনক পথ বেছে নিয়েছেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকেও চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে তিন অভিবাসী, যার মধ্যে শিশুরাও ছিল, নৌকার নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছিল। শান্ত আবহাওয়ার সুযোগে শত শত অভিবাসী উত্তর ফ্রান্সের সৈকত থেকে সমুদ্রযাত্রার চেষ্টা করছেন, অথচ পুলিশ শুধু দূর থেকে তা পর্যবেক্ষণ করছে।
ফরাসি সরকার ঘোষণা করেছে, তারা সৈকতের ৩০০ মিটারের মধ্যে সমুদ্রে “ট্যাক্সি বোট” আটকানোর মতো কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তবে পুলিশ ইউনিয়নের আশঙ্কা, এতে অভিবাসীদের জীবন আরও বিপদে পড়তে পারে, তাই এখনো এই কৌশল কার্যকর হয়নি।
ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইও এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের সরকার এই মৃত্যুযাত্রা বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং যারা এই ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে সেই মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই তীব্র করবে।”
ব্রিটেন ও ফ্রান্স যৌথভাবে নতুন একটি ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তি করেছে। এর আওতায় ইতিমধ্যেই সাতজন অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে বৈধ আশ্রয়প্রার্থী একটি পরিবার, যার মধ্যে একটি ছোট শিশুও রয়েছে, যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫