18.7 C
London
July 15, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ফ্রান্স হতে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেই ‘চাকুরি’, ভাড়ায় ছাড় দিয়ে গ্যাংয়ে টানছে পাচারকারীরা

চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের সময় যারা অপরাধী চক্রের হয়ে কাজ করতে রাজি হচ্ছে, তাদের জন্য পাচারকারীরা ভাড়ায় দিচ্ছে ‘ছাড়’। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর এই অভিবাসীদের চোরাচালান, মাদক, যৌন বাণিজ্য কিংবা জালিয়াতি কর্মকাণ্ডে লাগানো হচ্ছে বলে সংসদে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার।

তিনি বলেন, “এই দেশে অবৈধভাবে কাজ পাওয়া খুব সহজ করে তুলেছে অপরাধী চক্রগুলো। তারা অভিবাসীদের বলে, এখানে কাজ পাওয়া সহজ হবে, আর যদি তারা চক্রের হয়ে কাজ করতে চায়, তাহলে পারাপারের খরচেও ছাড় দেওয়া হবে।”

চলতি বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইতোমধ্যে ২২,৪৯২ জন যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছে, যা বছরের এই সময়ের জন্য একটি রেকর্ড। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ফ্রান্স এখন পর্যন্ত ৪৯৬টি নৌকা থামালেও ৩৮৫টি নৌকা সফলভাবে পার হয়েছে।

চক্রান্তকারীরা এখন নতুন কৌশল নিচ্ছে—অগভীর পানিতে অতিরিক্ত লোক বোঝাই নৌকা ছাড়ছে, যাতে ফরাসি কর্তৃপক্ষ আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। এতে করে একদিকে যেমন নৌকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে পাচারকারীদের মুনাফাও বাড়ছে।

ফরাসি সৈকতে পুলিশ সদস্যদের ওপর বারবার সহিংসতা চালাচ্ছে চোরাকারবারিরা, এমন দৃশ্যকে ‘অসহনীয়’ ও ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেন কুপার। এসব রোধে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি নতুন সমঝোতা হয়েছে, যার আওতায় “Compagnie de Marche” নামে একটি বিশেষ বাহিনী গঠিত হচ্ছে। তাদের কাজ হবে ফরাসি সৈকতে নিরাপত্তা বাড়ানো ও নৌকা ছাড়ার আগেই তা ঠেকানো।

চুক্তির অংশ হিসেবে চালু হচ্ছে “ওয়ান ইন, ওয়ান আউট” নীতি—অর্থাৎ একজন অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠালে একজন বৈধ আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে আসতে পারবে। তবে প্রাথমিকভাবে এই সংখ্যা সপ্তাহে মাত্র ৫০ জন হবে বলে ফ্রান্স জানিয়েছে, যা বর্তমান সপ্তাহপ্রতি গড় ৭৮২ জনের তুলনায় নগণ্য।

এই নীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে যুদ্ধপীড়িত, নির্যাতনের শিকার, কিংবা যাদের যুক্তরাজ্যে আত্মীয়স্বজন আছে—এমন আশ্রয়প্রার্থীদের।

এই চুক্তি আসে এমন সময়, যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যুক্তরাজ্য সফর শেষে যৌথ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।

এদিকে কনজারভেটিভ দলের শ্যাডো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ অভিযোগ করেছেন, গত এক বছরে লেবার সরকারের অধীনে ছোট নৌকায় অভিবাসন ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি বলেন, “এক বছর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন গ্যাং ধ্বংস করবেন। এখন সেই কথা মুখেও আনছেন না, কারণ এটা এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে।”

তিনি আরও বলেন, আশ্রয় হোটেল বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বর্তমানে সেখানে আরও ৩,০০০ বেশি মানুষ অবস্থান করছে।

এর জবাবে কুপার জানান, “এই সমস্যা টোরিদের ৩৪০ সপ্তাহের ব্যর্থতার ফল। যখন ফিলিপ নিজেই ইমিগ্রেশনমন্ত্রী ছিলেন, তখন অভিবাসন প্রায় তিনগুণ এবং ছোট নৌকা প্রবেশ দশগুণ বেড়েছিল।”

তিনি বলেন, “শুধু সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কিছু হবে না। সীমান্তের ওপারের দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করলেই এই সংকটের টেকসই সমাধান সম্ভব।”

সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস

এম.কে
১৫ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে স্কুলছাত্রের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকা

ইংল্যান্ডে গৃহহীন পরিবারদের বড় শহর থেকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে সরকার

ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন শর্তহীন নয়ঃ ডেভিড ক্যামেরন