বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশের মাটির নিচে সম্পদ মূল্যায়নের জন্য টু-ডি সিসমিক জরিপ চালানোর জন্য নরওয়ের কোম্পানি টিজিএসকে দায়িত্ব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। জরিপ চালানোর জন্য চীনের একটি সায়েন্স ভেসেলকে কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিটি। কিন্তু চীনের জাহাজ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে জরিপ চালানোয় ভারত অস্বস্তি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
বাংলাদেশ অংশের বঙ্গোপসাগরের একদিকে মিয়ানমার ও অন্যদিকে ভারত। বাংলাদেশ অঞ্চলের ভূতত্ত্ব সম্পর্ক জানতে হলে অন্য দুটি দেশের সীমানা এলাকার কিছু অংশের জরিপ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাগরের তলদেশ জরিপ করার সময় সমুদ্রসীমানার বাইরের কিছু অংশ জরিপ করতে হয়। না হলে ভূতত্ত্ব সম্পর্কে পুরো ধারণা পাওয়া যায় না। এ জন্য আন্তর্জাতিক প্রথা হচ্ছে, সীমানা রয়েছে এমন দেশগুলো বৈজ্ঞানিক জরিপের ক্ষেত্রে আপত্তি করে না। তবে কেউ যদি আপত্তি করে, তখন সীমানা অতিক্রম করে কোনও ধরনের জরিপ চালানো যায় না।
উদাহরণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশ অংশের সম্পূর্ণ তথ্য পেতে চাই, তবে ভারতের সীমানার মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত জরিপ চালালে গোটা ভূতত্ত্ব সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। একইভাবে মিয়ানমার অংশে ১০ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল জরিপ চালালে ওই সীমান্তের ভূতত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে।’
নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এই জরিপ চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে চায়না ওয়েলফিল্ড সার্ভিস লিমিটেড নামক একটি কোম্পানিকে এবং এর সদর দফতর বেইজিংয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘জরিপের কাজে যেহেতু ভারত ও মিয়ানমারের অংশের বঙ্গোপসাগরে ওই জাহাজকে প্রবেশ করতে হবে, এ জন্য আমরা তাদের অনুমতি চেয়েছি।’
এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারত অস্বস্তি প্রকাশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের কাছে কয়েকটি তথ্য জানতে চেয়েছে। আশা করছি তাদের অনুমতি আমরা পাবো।’
ভারত যদি অনুমতি না দেয়, তবে জরিপকার্য ব্যাহত হবে কিনা জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘না। আমরা আমাদের অংশের তথ্যের ভিত্তিতে মোটামুটি ধারণা করা সম্ভব সমুদ্র তলদেশে কী সম্পদ রয়েছে।’
জরিপকাজে চীনের জাহাজ ব্যবহার না করে অন্য জাহাজ ব্যবহার করা সম্ভব কিনা, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব দিয়েছি টিজিএসকে। কোন জাহাজ ব্যবহার করা হবে, সেটি টিজিএস ঠিক করবে। স্বাভাবিকভাবে সুলভমূল্যে ভালো মানের জরিপ যে করে দেবে, তাকে দিয়েই টিজিএস কাজ করাবে। চুক্তি অনুযায়ী এখানে বাংলাদেশের কিছু বলার নেই।’
এর আগেও বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি সান্তোস, কনোকোফিলিপস ও পসকো-দায়েউ বঙ্গোপসাগরে জরিপ চালিয়েছিল এবং সীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশের ভূতত্ত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, টিজিএস প্রাথমিক অবস্থায় ১১ হাজার লাইন কিলোমিটার এবং সর্বমোট ৩২ লাইন হাজার কিলোমিটার জরিপ চালাবে। এই কাজ গত ৩ জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে। আগামী মে মাসে প্রথম প্রতিবেদন এবং সামনের বছর ২০২৪ সালের প্রথমভাগে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে কোম্পানিটি। এটি একটি মাল্টি-ক্লায়েন্ট জরিপ অর্থাৎ এখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য টিজিএস বিভিন্ন আগ্রহী কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারবে। এই জরিপের জন্য বাংলাদেশকে কোনও অর্থ ব্যয় করতে হবে না।