যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধামন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রাক্তন শীর্ষনেতা বরিস জনসনের বিরুদ্ধে করোনাবিধি লঙ্ঘণের নতুন অভিযোগ এসেছে। ইতোমধ্যে দেশটির মন্ত্রিসভার নির্দেশ অনুসারে সেই অভিযোগের তদন্তেও শুরু করেছে দেশটির পুলিশ।
মঙ্গলবার এই সংবাদটি প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন দৈনিক সংবাদমাধ্যম । পত্রিকাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যে করোনাজনিত লকডাউন চলার সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় জেলা টেমস ভ্যালির একটি গ্রামীণ এলাকার বিলাসবহুল প্রাসাদে একাধিকবার মদ-পার্টির আয়োজনের অভিযোগ এসেছে বরিস জনসনের বিরুদ্ধে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় বাসভবন লন্ডনের ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে অবস্থিত। এটি ছাড়াও ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর কয়েকটি বাসভবন আছে। সাধারণভাবে সেগুলোর নাম ‘চেকার কোর্ট’ বা সংক্ষেপে ‘চেকার’। কেন্দ্রীয় বাসভবনের মত চেকারগুলোর ব্যয়ও নির্বাহ করে যুক্তরাজ্যের সরকার।
টেমস ভ্যালির যে প্রাসাদটিতে লকডাউন চলাকালে কয়েকবার পার্টি আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে জনসনের বিরুদ্ধে— সেটিও একটি চেকার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দৈনিক কার্যবিবরণীর তালিকা মিনিস্ট্রিয়াল ডায়েরির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালে কয়েকবার টেমস ভ্যালির সেই চেকারে মদ-পার্টির আয়োজন করেছেন বরিস জনসন।
সম্প্রতি ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগটি আসার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা তোলা হয়েছে এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লন্ডন ও টেমস ভ্যালি পুলিশকে অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে মন্ত্রিসভার একটি সূত্র।
এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে লন্ডন ও টেমস ভ্যালি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। উভয় এলাকার পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য বর্তমানে যাচাই করছেন তারা।
২০২০ সালের ১১ মার্চ জাতিসংঘভিত্তিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে মহামারি ঘোষণা করার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও দীর্ঘমেয়াদে একটানা লকডাউন জারি করে দেশটির সরকার। ওই সময় দেশটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, বার প্রভৃতি বন্ধ রাখাসহ সামাজিক মেলামেশায় কঠোরভাবে নিষেধ ছিল এবং লকডাউনের বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল এ সম্পর্কিত সরকারি আদেশে।
কিন্তু ২০২১ সালের শেষের দিকে অভিযোগ ওঠে— লকডাউনের ওই সময় লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাধিকবার নিজের বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীসহ মদ-পার্টি উপভোগ করেছেন। পুলিশি তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা মেলার পর এটি পরিচিতি পায় ‘পার্টি গেট কেলেঙ্কারি’ নামে এবং এই কেলেঙ্কারির জেরে ২০২২ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ৫৮ বছর বয়সী বরিস জনসন।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে বরিস জনসনই প্রথম প্রধানমন্ত্রী— যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ উঠেছে এবং তার জেরে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে।