যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্যবসায়ী গ্যারিসন লুটেল। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারহানা করিমকে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। ফারহানা স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করতেন। তিন বছর আগে তাদের প্রথম একটি সন্তান হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ফারহানা ও গ্যারিসনের নিজস্ব বাসা ছিল। এ বছরের শুরুর দিকে ফারহানা আবার অন্তঃসত্ত্বা হন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জুন মাসে ফারহানা করিম বাংলাদেশে চলে আসেন। অন্তঃসত্ত্বার সময় তার বোন-মায়ের সঙ্গে থাকা জরুরি– এই অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে আসেন। আসার পর তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সন্তানদের কথা চিন্তা করে গ্যারিসন ফারহানাকে নিয়মিত টাকা দিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু পরে দেখলেন, অনেকদিন হয়ে গেছে যোগাযোগ করছে না। কোনো আপডেট দিচ্ছে না। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তিনি চেষ্টা করেছেন যোগাযোগ করতে কিন্তু পারেননি। যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে অক্টোবর মাসে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশে আসার পর গ্যারিসন যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু ফারহানা দেখা করতে চান না, বাচ্চাদেরও দেখাতে চান না। একপর্যায়ে উত্তরা থানার পুলিশ ও গ্যারিসন যে হোটেলে থাকতেন তাদের সহযোগিতা নিয়ে ফারহানার বাসায় যান। বাসায় গিয়ে জানতে পারেন, ফারহানা করিম কানাডিয়ান একজন ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করছেন। তিনি কানাডিয়ান ওই ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন। এদিকে এক মাস আগে আরেকটি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন ফারহানা।
গ্যারিসন লুটেলের আইনজীবী বলেন, সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, ফারহানা গ্যারিসনকে হাসপাতালের কাগজ দেখিয়ে বলেছেন দ্বিতীয় সন্তান গ্যারিসনের নয়। এ সন্তান তার পার্টনার কানাডিয়ান নাগরিকের। তিনি একটা ম্যারেজ ডকুমেন্ট দেখিয়ে বলেছেন, কানাডিয়ান নাগরিককে বিয়ে করেছেন। কিন্তু আমেরিকান নাগরিক গ্যারিসনের সঙ্গে তার এখনো ডিভোর্স হয়নি। গ্যারিসনের বাংলাদেশে আসার অন্যতম কারণ– পুরান ঢাকার একজন কাজী যুক্তরাষ্ট্রে একটি কাগজ পাঠায়। সেটি তালাকের নোটিশ। মুসলিম পারিবারিক আইনে একটি তালাকের নোটিশ পাঠান। নোটিশ দেখে গ্যারিসনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
গ্যারিসন লুটেলের আইনজীবী বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, নোটিশটা ইনভ্যালিড। কারণ তাদের বিয়ে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট অব মিজোরির আইন অনুযায়ী। ডিভোর্স হলে স্টেট আইনে হতে হবে।
সন্তানদের টানে গ্যারিসনকে এখন বাংলাদেশে থাকতে হচ্ছে। সাত মাস ধরে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মিশতে মিশতে তিনি এ দেশের মানুষের প্রেমে পড়ে গেছেন। তাই এ দেশেই থাকতে চান। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ী গ্যারিসন চ্যারিটি সংগঠন করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। বাংলাদেশের ট্যুরিজমকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চান। এ লক্ষ্য সামনে রেখে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন তিনি। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন নাগরিক গ্যারিসন ও তার আইনজীবী।
আইনজীবী বলেন, গ্যারিসন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে মিশেছেন। মিশতে মিশতে বাংলাদেশের মানুষের প্রেমে পড়েছেন। হাইকোর্টে মামলার পর থেকে তাকে রাস্তাঘাটে যেভাবে মানুষ সমর্থন করে, এটা গ্যারিসনের ভালো লেগেছে। এই সমর্থন তিনি নিজের দেশেও পাননি। এখানে এই সমর্থনটা তার ভালো লাগে। গ্যারিসন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতে চান। যেহেতু সেখানে তার মা-বাবা আছেন। মামলার কারণে তাকে বাংলাদেশে থাকতে হচ্ছে।
গ্যারিসন লুটেলের আইনজীবী বলেন, তিনি একটা নট ফর প্রফিট অর্গানাইজেশন করার কাজ শুরু করেছেন। তার এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হবে বিদেশে যারা আছেন তারা যেন বাংলাদেশে ট্যুরিজমের জন্য আসেন। শুধু বিদেশিরা এসে কক্সবাজার, ইনানি বিচ, খাগড়াছড়ি দেখে চলে গেল, এরকম না। গ্যারিসনের প্রতিষ্ঠান কিছু মাদ্রাসা, কিছু এতিমখানা, কিছু মসজিদ, মন্দির, দর্শনীয় স্থানকে স্পন্সর করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধরুন কেউ বিদেশ থেকে এলেন, তিনি হয়ত কিশোরগঞ্জের একটি বড় এতিমখানা দেখতে গেলেন। ওই বিদেশি এতিমখানার বাচ্চাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটালেন, গ্রামে থাকলেন। এতে তার ট্যুরিজমটা হলো। আবার যে কমিউনিটিতে এলেন কমিউনিটির কিছু উন্নয়ন হলো। এ বিষয়গুলো গ্যারিসন প্রমোট করতে চাইছেন।
এ বিষয়ে গ্যারিসন লুটেল বলেন, বাংলাদেশ আমার ভালো লাগে। এ দেশের মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছি। এ দেশকে সেকেন্ড হোম মনে করি। এখানে চ্যারিটি সংগঠন করে কাজ করতে চাই।
এম.কে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪