বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আতিকুর রহমান এ আদেশ দেন। এর আগে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন আদালতে বলেন, এনায়েত করিম নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সিআইএ’র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান হিসেবে পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ভারতের ‘র’-এর এজেন্ট। বাংলাদেশে এসে তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে সরকারি নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। তার কাছ থেকে জব্দ করা দুটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে আশা করছে পুলিশ।
এনায়েত করিমের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। তারা যুক্তি দেখান, এনায়েত করিম ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন এবং ১৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার কথা ছিল। হোটেল ও গুলশানে অবস্থানকালে তিনি কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন না। শুধু গাড়িতে করে ঘোরাফেরার কারণে তাকে আটক করে প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয় এবং পরবর্তীতে মামলা দিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী মহলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বর্তমান সরকার দুর্বল অবস্থায় আছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে—এমন দাবি করে তিনি নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনায় কাজ করছিলেন।
পুলিশ জানায়, ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে ঢাকায় আসেন এনায়েত করিম। প্রথমে সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন এবং পরে গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। তার ফোন ও নথি বিশ্লেষণে ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া তিনি আগেও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ২০০১-০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম জানিয়েছেন, আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি প্রভাবশালী দেশই ঠিক করবে কে সরকার প্রধান হবেন। তদন্তকারীদের মতে, এনায়েত করিমের কার্যকলাপ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
সূত্রঃ যুগান্তর
এম.কে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫