18 C
London
September 19, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ উৎপাদনে আদানির চেয়েও ব্যয়বহুল এস আলম

আদানির চুক্তি নিয়ে বেশ আগে থেকেই বিতর্ক রয়েছে। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কয়লার অতিরিক্ত দামের কারণে আদানির বিদ্যুৎ কেনায় অস্বীকৃতি জানায় সংস্থাটি। পরে কয়লার দাম কমানোয় সম্মত হয় আদানি। তবে দেশের বেসরকারি খাতের আরেক বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। যদিও এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির আরও বেশি হারে গচ্চা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ডলার সংকটে নিয়মিত কয়লা আমদানি করতে না পারায় বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কয়লভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এছাড়া কারিগরি ত্রুটিতেও নিয়মিতই বন্ধ থাকে কোনো না কোনো কেন্দ্র। ফলে এগুলোর গড় ক্যাপাসিটি চার্জ অনেক বেশি পড়ছে। তবে গত অর্থবছর এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতার সবচেয়ে কম ব্যবহার হয়। মাত্র ২১ শতাংশ ব্যবহার হলেও বসিয়ে রেখেই কেন্দ্রটির জন্য তিন হাজার ২৮৮ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতারও ব্যবহার হয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই কেন্দ্রটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে দুই হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। এছাড়া পটুয়াখালীতে নির্মিত ৩০৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার বরিশাল ইলেকট্রিক কেন্দ্রটি সক্ষমতার ৩০ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। ওই কেন্দ্রটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৭৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ-চীনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত পায়রা ও ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির সক্ষমতা তুলনামূলক বেশি ব্যবহার হয়েছে। এ দুটির ব্যবহারের হার ছিল যথাক্রমে ৬৫ শতাংশ ও ৬১ শতাংশ। এর বিপরীতে কেন্দ্র দুটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে চার হাজার ২৯২ কোটি টাকা ও পাঁচ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। কয়লাভিত্তিক পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে মোট ১৫ হাজার ৬৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

পিডিবির তথ্যমতে, কয়লাভিত্তিক পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রর মধ্যে গত অর্থবছর সবচেয়ে খরুচে তথা ব্যয়বহুল ছিল এল আলমের এসএস পাওয়ার। গত অর্থবছর এ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৪০ কোটি ২৯ লাখ ৪৭ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় পড়েছে ইউনিটপ্রতি ছয় টাকা ৬৪ পয়সা। আর গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে ১৩ টাকা ৬৮ পয়সা এবং গড় পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (ওঅ্যান্ডএম) ২১ পয়সা। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ২০ টাকা ৫৩ পয়সা।

যদিও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কয়লা তথা জ্বালানি ব্যয় সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৮১ কোটি ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় পড়েছে ইউনিটপ্রতি আট টাকা ১৬ পয়সা। আর গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে সাত টাকা ৯৬ পয়সা। ওঅ্যান্ডএম ব্যয় না থাকায় এ কেন্দ্রটিতে গড় উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ১৬ টাকা ১২ পয়সা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রামপালের কয়লা সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনা হয় না। বরং কয়লা সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে দেশীয় বসুন্ধরা গ্রুপ এ কাজটি পায়। তারা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে রামপাল কর্তৃপক্ষ তথা বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে। এতে অনেক সময় নমুনার (স্যাম্পল) সঙ্গে কয়লার মূল চালানের গুণগতমান এক থাকে না। কয়লায় ভাঙার হার বেশি হলে সেগুলোর তাপনক্ষমতা (হিটরেট) কম হয়। আবার বসুন্ধরা নিজস্ব কমিশন যুক্ত করায় দামও কিছুটা বেশি পড়ে। ফলে এ কেন্দ্রটির জ্বালানি ব্যয় পিডিবির জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

এদিকে রামপালের মতো তৃতীয় পক্ষ থেকে কয়লা না কিনলেও শর্তের সুবাদে কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে আদানি। কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি ওঠার পর গত বছর কোম্পানিটির পক্ষ থেকে পিডিবিকে জানানো হয়েছিল পায়রা, রামপাল ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে যেটার জ্বালানি ব্যয় সবচেয়ে বেশি আদানি তার চেয়ে শূন্য দশমিক শূন্য এক (০.০১) সেন্ট কম রাখবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে পেলেও আদানি কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে।

মূলত এ কারণে আদানির জ্বালানি বিল পড়েছে প্রতি ইউনিটের জন্য সাত টাকা ৫৪ পয়সা। গত অর্থবছর আদানির কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে প্রায় ৮১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে ছয় টাকা ৬০ পয়সা এবং ওঅ্যান্ডএম ব্যয় এক টাকা। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুৎ কেনায় গড়ে ব্যয় হয়েছে ১৫ টাকা ১৪ পয়সা। মূলত চুক্তিতে অসম সুবিধার জন্য আদানির ওঅ্যান্ডএম ব্যয়ও সবার চেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, রামপালের পরিবর্তে পায়রার সঙ্গে তুলনা করে দাম নির্ধারণ করলে আদানির জ্বালানি বিল পড়ত প্রতি ইউনিটে ছয় টাকার কাছাকাছি। অর্থাৎ উৎপাদন ব্যয় আরও দেড় টাকা কমানো যেত। বিষয়টি নিয়ে আদানিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। একাধিকবার বৈঠকও হয়েছে। তবে আদানি এ শর্তে রাজি হচ্ছে না। বরং তারা আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কয়লার দাম আরও ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ বেশি নিতে চায়।

এদিকে বরিশাল ইলেকট্রিক কেন্দ্রটি থেকে গত অর্থবছর প্রায় ৭৯ কোটি ৭৪ লাখ ৭ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় পড়েছে ইউনিটপ্রতি ছয় টাকা ৮৭ পয়সা। আর ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে গড়ে পাঁচ টাকা ৯৯ পয়সা এবং ওঅ্যান্ডএম ব্যয় ৩১ পয়সা। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ১৩ টাকা ১৭ পয়সা।

অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ছিল পায়রা। গত অর্থবছর এ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭৫৪ কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় পড়েছে ইউনিটপ্রতি ছয় টাকা ১৮। আর ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে গড়ে পাঁচ টাকা ৬৯ পয়সা এবং গড় ওঅ্যান্ডএম ব্যয় মাত্র এক পয়সা। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ১১ টাকা ৮৮ পয়সা। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমার সুবিধা সবচেয়ে বেশি এ কেন্দ্রটি থেকে পেয়েছে পিডিবি।
যদিও পায়রার চেয়েও কম জ্বালানি ব্যয় পড়েছে মাতারবাড়ী কেন্দ্রটিতে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট চালু হয় গত অর্থবছর। ৫৭৫ মেগাওয়াটের ওই ইউনিটের ৫৬ শতাংশ গত অর্থবছরে ব্যবহার হয়েছে। এতে ওই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ২৮৩ কোটি ২৬ লাখ ৪৯ হাজার ইউনিট। এজন্য গড় জ্বালানি ব্যয় পড়েছে ছয় টাকা ১৩ পয়সা। অর্থাৎ পায়রার চেয়েও পাঁচ পয়সা কম ব্যয় ছিল মাতারবাড়ীর। তবে মাতারবাড়ী কেন্দ্রটি পুরো দমে চালু না হওয়ায় এর ফিক্সড কস্ট (স্থায়ী ব্যয়) বিবেচনা করা হয়নি। ফলে এ কেন্দ্রটির ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনও পায়নি পিডিবি।

সূত্রঃ বিজনেস এক্সপ্রেস

এম.কে
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

দেয়াল টপকে পালালেন ডিবির সেই হারুন

যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের এনআইডি আবেদন ৫ জুনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

ছাত্র-জনতার এক দফার ডাকে সবাই ঢাকা চলুন : হেফাজত আমির