বিলেতে অনেকে মর্গেজের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রপার্টি কিনতে চান, কিন্তু ইসলামিক বিধিনিষেধের কারণে ব্যাংক লোনের ইন্টারেস্ট দিতে চান না। এক্ষেত্রে আপনারা ইসলামিক মর্গেজ বা হোম পারচেজ প্ল্যান (এইচপিপি)-এর মাধ্যমে প্রপার্টি কিনতে পারবেন। বিলেতে ইসলামিক মর্গেজ শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
বিলেতে হোম পারচেজ প্ল্যান (এইচপিপি)-এর মাধ্যমে রেসিডেন্সিয়াল এবং বাই টু লেট প্রপার্টি ক্রয় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলেতে পূর্বে স্বল্প সংখ্যক শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ ল্যান্ডার থাকলেও, বর্তমানে প্রপার্টি মার্কেটে বেশ কিছু শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ ল্যান্ডর রয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন নতুন নতুন শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ প্রোডাক্ট পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ প্রক্রিয়াও সহজ হচ্ছে।
শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ এর মাধ্যমে প্রপার্টি ক্রয় এবং সাধারণ মর্গেজ এর মাধ্যমে প্রপার্টি ক্রয় এর মধ্যে বাহ্যিক কোন ভিন্নটা নেই। ইসলামিক ফিনান্সিয়াল মডেল কাজ করে রিস্ক শেয়ার এর ভিত্তিতে। এই মডেল এ কাস্টমার এবং ল্যান্ডার বা ব্যাংক উভয়ই তাদের ইনভেস্টকৃত এসেট এর জন্য রিস্ক শেয়ার করবে। সাধারণ মর্গেজ এর মত শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ এর মাধ্যমে আপনি যে প্রপার্টি কিনতে চান তার জন্য আপনাকে প্রপার্টির মূল্য এর ১০ থেকে ২০% ডিপোজিট রাখতে হবে। ল্যান্ডার প্রপার্টি সেলার নিকট হতে আপনার প্রপার্টি কিনে নিবে এবং আপনার সাথে ২০ থেকে ৩০ বছরের ইজারা চুক্তি করবে। চুক্তি এবং ডিপোজিট অনুযায়ী আপনার প্রপার্টির ৮০ থেকে ৯০% মালিকানা থাকবে ল্যান্ডার এর নিকট এবং চুক্তিকৃত সময়সীমা পর্যন্ত আপনি ল্যান্ডারকে রেন্ট হিসেবে মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট পরিশোধ করে যাবেন। নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে ল্যান্ডার আপনার নিকট প্রপার্টির সম্পূর্ণ মালিকানা হস্তান্তর করবে।
ইসলামিক মর্গেজ এর ক্ষেত্রে মাসিক রেন্ট পেমেন্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে।
রি-পেমেন্ট ভিত্তিক
সাধারণত রেসিডেন্সিয়াল প্রপার্টির মর্গেজ এর জন্য রি-পেমেন্ট ভিত্তিক মর্গেজ নেয়া হয়ে থাকে। রি-পেমেন্ট ভিত্তিক মর্গেজ এর আরেক নাম হল ক্যাপিটাল এন্ড রেন্ট অনলি মর্গেজ। রি-পেমেন্ট ভিত্তিক মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে আপনি প্রতিমাসে আপনার ইসলামিক মর্গেজ ল্যান্ডরকে প্রপার্টির রেন্ট এর পাশাপাশি, আপনার প্রপার্টির আরও বেশি ইকুইটি ক্রয় করার জন্য অতিরিক্ত কিছু ক্যাপিটাল প্রপার্টির রেন্ট এর সাথে পরিশোধ করবেন। রি-পেমেন্ট ভিত্তিক মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট করলে আপনার প্রপার্টির ইজারা চুক্তির বছরের সংখ্যা কিছুটা কম হবে ।
রেন্ট অনলি ভিত্তিক
সাধারণত বাই টু লেট প্রপার্টির মর্গেজ এর জন্য রেন্ট অনলি ভিত্তিক মর্গেজ নেয়া হয়ে থাকে। এই মর্গেজের মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে আপনি প্রতিমাসে আপনার ইসলামিক মর্গেজ ল্যান্ডরকে কেবলমাত্র প্রপার্টির রেন্ট পরিশোধ করবেন। যেহেতু কেবলমাত্র প্রপার্টির রেন্ট পরিশোধ করা হবে, সে জন্য রেন্ট অনলি ভিত্তিক মর্গেজের মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট এর এমাউন্ট রি-পেমেন্ট ভিত্তিক মর্গেজের তুলনায় কম হয়ে থাকে।
শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ এর জন্য মর্গেজ এডভাইজার
বিলেতে শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ নিয়ে প্রপার্টি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেবার পর একজন অভিজ্ঞ মর্গেজ এডভাইজার এর সাথে যোগাযোগ করুন। মর্গেজ এডভাইজার হল একজন ফিন্যান্সিয়াল স্পেশালিষ্ট, যিনি প্রপার্টি মর্গেজ সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রপার্টি বায়ার এর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মর্গেজ এডভাইজার তার ক্লায়েন্ট বা প্রপার্টি বায়ার এর জন্য সর্বোত্তম মর্গেজ প্রোডাক্টটি রেকমেন্ড করে থাকে। মর্গেজ এডভাইজার তার ক্লায়েন্ট এর ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট প্রসেস, প্রপার্টির কোটেশন এবং লোন অ্যাপলিকেশন তৈরি করে দেয়। তার ক্লায়েন্ট যাতে মর্গেজ পায় এর জন্য মর্গেজ এডভাইজার সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে।
শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ অ্যাপলিকেশন এর সময় ল্যান্ডাররা আপনার কাছে যে সব তথ্য জানতে চাইবে:
পরিচয়পত্রঃ প্রথমেই দেখে নিন আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ আছে কিনা। প্রয়োজনে রিভিউ করে নিন। আপনার যদি এই দেশে জন্ম হয়ে থাকে তাহলে পাসপোর্ট এর পরিবর্তে ফুল ড্রাইভিং লাইসেন্স আইডি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি বৈধ ভিসা নিয়ে এদেশে থাকেন,তাহলে অ্যাপলিকেশন করাকালীন সময় আপনার ভিসার কাগজ বা কার্ড সাথে থাকতে হবে।
ঠিকানার প্রমানপত্রঃ আপনার ঠিকানার প্রমানপত্র হিসেবে কাউন্সিল ট্যাক্স বিল, ইউটিলিটি বিল অথবা ব্যাংকের স্টেটমেন্ট ব্যবহার করা যাবে।
পে-স্লিপঃ আপনি যদি পার্ট টাইম/ ফুল টাইম চাকুরী করেন, তাহলে নূন্যতম সর্বশেষ তিন মাসের পে-স্লিপ এবং সর্বশেষ পি-৬০ এর কপি সংগ্রহে রাখুন। আপনি যদি নিয়মিত অথবা অনিয়মিত বোনাস পান, তাহলে বিগত ২ বছরের বোনাসের পে-স্লিপ গুলো সংগ্রহে রাখুন। আপনার যদি নিজস্ব ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান থাকে অথবা প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডার হন। তবে সর্বশেষ ২ থেকে ৩ বছরের এসএ-৩০২ এবং ট্যাক্স ওভারভিউ এর প্রয়োজন হবে।
ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ যে ব্যাংক একাউন্টে আপনার বেতন পান এবং যে একাউন্টে আপনার নিয়মিত লেনদেন হয়, সে একাউন্টের সর্বশেষ তিন মাসের স্টেটমেন্ট সাথে রাখুন।
ডিপোজিট স্টেটমেন্টঃ আপনার ডিপোজিট এর টাকা যে ব্যাংক একাউন্টে রাখেন, তার ছয় মাসের স্টেটমেন্টস সংগ্রহে রাখুন। আপনি যদি আপনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন অথবা অন্য কারো কাছ থেকে ডিপোজিটের টাকা গিফট হিসেবে নেন, তাহলে দাতার কাছ থেকে তার আইডি, গিফট ডিক্লারেশন স্টেটমেন্ট এবং তার ব্যাংকের স্টেটমেন্টস এর কপি সংগ্রহে রাখুন।
ক্রেডিট রিপোর্টঃ যেকোনো ব্যাংকে মর্গেজ এর এপ্লিকেশন করলে তারা প্রথমেই আপনার ক্রেডিট চেক করবে। সেজন্য ভালো হয়, যদি আপনি নিজেই আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট আগে দেখে নিন।আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট এ যদি কোন ভূল তথ্য থাকে, তাহলে তা আগে থেকেই সংশোধন করে নিতে পারবেন। আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট এর জন্য এক্সপেরিয়ান, ইকুইফেক্স অথবা এ জাতীয় ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সাথে রেজিস্ট্রেশন করে আপনার রিপোর্ট এর একটি কপি নিয়ে নিন।
ইলেক্টরাল রোলঃ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার নাম ইলেক্টরাল রোল এ আপ-টু-ডেট রাখবেন। তাহলে ব্যাংক এর ক্রেডিট চেক এর সময় তারা খুব সহজেই আপনার বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে।
প্রপার্টি মার্কেট এবং শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মর্গেজ সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে নিন্মের ই-মেইল অথবা টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
Email: info@benecofinance.co.uk
Tel: 02080502478