ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অফ কমন্সে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগম। সাবেক স্বামী এহতেশামুল হকের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, একের পর এক হয়রানি ও নির্যাতনের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন বিপর্যস্ত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের সুরক্ষা দিতে কর্মক্ষেত্র, রাজনৈতিক দল ও নিয়োগকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আপসানা বেগমের ভাষ্য অনুযায়ী, এহতেশামুল তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ‘অভিযান’ পরিচালনা করছেন। এই কারণেই গত নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একই আসনে দাঁড়িয়েছিলেন। আপসানার দাবি, তার সাবেক স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে তাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
গত বছরের নির্বাচনে আপসানা লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে ১৮ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করলেও এহতেশামুলের প্রার্থী হওয়া ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি ভোট পেলেও তার প্রার্থিতা অনেকের কাছে প্রতিহিংসার প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। এর আগেও তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন।
এই ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে বাংলাদেশি রাজনীতিতে। সম্প্রতি এহতেশামুল যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে। সেখানে তিনি কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে—যিনি নিজের সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের মুখে আছেন, তিনি কি বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন ও দায়িত্বশীল রাজনীতির চেহারা তুলে ধরতে পারবেন?
আপসানার রাজনৈতিক যাত্রা ছিল চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন। পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের সংকট, আদালত পর্যন্ত গড়ানো অভিযোগ ও রাজনৈতিক চাপে বারবার আলোচনায় উঠে এসেছেন।
২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা হলেও আদালত সব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেন। আপসানার দাবি, এসবই এহতেশামুলের বিদ্বেষমূলক প্রচারণার অংশ। আর আজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন নতুন করে, যা আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে তার সাবেক স্বামীকে।
এহতেশামুল অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি বলেছেন, আপসানার প্রতি তার ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ নেই, কেবল রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতেই তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে পারিবারিক জীবনের এতো বিতর্ক ও বিরোধিতা সত্ত্বেও এখন বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল গোছানোর তার প্রচেষ্টা জনমনে সংশয় তৈরি করেছে।
একই পরিবারের দুই প্রাক্তন সদস্যের দ্বন্দ্ব এভাবে দুই দেশের রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে উঠেছে। আপসানার বক্তব্য শুধু তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়, বরং প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে—যে নেতা ব্যক্তিগত সম্পর্কেই স্বচ্ছতা রাখতে পারেননি, তিনি কি বাংলাদেশের জন্য সুস্থ রাজনীতির পথ তৈরি করতে পারবেন?
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫