7.7 C
London
November 13, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ভাড়া বাসার আলিশান অফিসে বসেন সিলেটের এই পুলিশ কর্মকর্তা

বিশেষ প্রতিনিধি: দরজায় আকর্ষণীয় নেমপ্লেট। ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সুসজ্জিত ফানির্চারসহ দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্র। দেখলে মনে হবে কোনো সরকারি কর্মকর্তা নয়, বরং কর্পোরেট হাউসের এমডির অফিস!

সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) আজবাহার আলী শেখের অফিস এটি। কোনো টেন্ডার ছাড়া নগরীর মুন্সিপাড়ায় এসএমপির ভাড়া বাসাটি কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে আলিশানভাবে সাজিয়েছেন তিনি। এমন নান্দনিক অফিস নেই খোদ এসএমপি কমিশনারেরও। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এসএমপির অন্য কর্মকর্তারাও।

তারা বলেছেন, একজন ডিসি কীভাবে এত টাকা ব্যয় করে নিজের অফিস সাজাতে পারেন। এই টাকার উৎস কী?

শুধু এখানেই শেষ নয়, সরকার থেকে বাসা ভাড়ার সম্মানি পেলেও তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন ডিসি উত্তর অফিসের জন্য নেয়া সরকারি ভাড়া বাসায়। একইভাবে থাকতেন অন্য ডিসিরাও কিন্তু প্রায় বছরখানেক আগে এসএমপি কমিশনারের নির্দেশে তারা পরিবার নিয়ে অফিসের জন্য নেয়া সরকারি ভাড়া বাসা ত্যাগ করেন। অদৃশ্য ক্ষমতার বলে এখনও পরিবার নিয়ে অফিসের জন্য নেয়া সরকারি ভাড়া বাসার তৃতীয়তলায় দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাস করছেন ডিসি আজবাহার।

অন্যদিকে সরকারি বাসা ভাড়ার টাকাও পাচ্ছেন তিনি। এই অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ করেছে সিলেটের এক যুবলীগ নেতার প্রতিষ্ঠান ‘সাওদা ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টুডিও’। এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি ওই যুবলীগ নেতাও।

সাওদা ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টুডিওর কর্ণধার  টিভিথ্রিকে বলেন, এই কাজটি করে ঝামেলায় আছি। পুরো কাজটি আমার প্রতিষ্ঠান করেনি। এছাড়া টুকটাক কিছু কাজ অন্যরাও করেছে। ব্যয়ের পরিমাণটা সঠিক বলতে পারব না। আনুমানিক সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো হবে।

সম্প্রতি একই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ করানো হয়েছে এসএমপির ডিসি হেডকোয়ার্টার্স ও ডিসি ট্রাফিক অফিসও।

তিনি জানান, ডিসি ট্রাফিক অফিসের কাজ বাসার মালিক করিয়ে দিয়েছেন। ব্যয় হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ডিসি হেডকোয়ার্টার্স অফিসের কাজ এসএমপির অর্থায়নে করানো হয়েছে। সেখানে মাত্র ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

তবে এসএমপির একটি সূত্র টিভিথ্রিকে জানিয়েছে, সাড়ে পাঁচ লাখ নয় এর তিনগুণ টাকা ব্যয় হয়েছে ডিসি উত্তর অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে। অর্থায়ন করেছেন ডিসি আজবাহার নিজেই। একটি অস্থায়ী অফিসে এত টাকা ব্যয় করার রহস্য কী? কেনইবা সরকারি অফিস নিজের অর্থায়নে আলিশানভাবে সাজিয়েছেন এমন নানা প্রশ্ন অন্য ডিসিদেরও।

ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হলেও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না ডিসিরা। কারণ লোক মুখে শোনা যায়, ডিসি আজবাহার নাকি এসএমপির কমিশনারের সবচেয়ে কাছের লোক।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী টিভিথ্রিকে বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা অস্থায়ী অফিসে বিনা টেন্ডারে কোনোভাবেই এমনটি করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ করেছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হোক। পুলিশ বাহিনীতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এই টাকার উৎস খুঁজে বের করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএমপির উপকমিশনার (হেডকোয়ার্টার্স) তোফায়েল আহমদ টিভিথ্রিকে বলেন, ডিসি উত্তর অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য কোনো টেন্ডার হলে তা আমার জানা থাকার কথা। মনে হয় না এরকম কোনো টেন্ডার হয়েছে।

এসএমপি কমিশনারের নির্দেশে অন্য ডিসিরা পরিবার নিয়ে অফিস ত্যাগ করলেও ডিসি আজবাহার কেন ছাড়েননি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেছি। আশা করি ছেড়ে দেবে। যতটুকু জানি এজন্য বাসাও খুঁজছে। ওর স্ত্রী আবার সরকারি চাকরি করে, তারা দু’জনই ব্যস্ত।

এ ব্যাপারে এসএমপির উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) আজবাহার আলী শেখের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এসএমএস পাঠিয়েও উত্তর মেলেনি।

তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন এসএমপির কমিশনার গোলাম কিবরিয়া। তিনি টিভিথ্রিকে বলেন, এসএমপির সবার সাথেই আমার একই রকম (ভালো) সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্যই তো সাড়ে চার বছর ধরে এখানে আছি। কারও সাথে আমার আলাদা কোনো সম্পর্ক নেই।

২০ অক্টোবর ২০২০
এমকেসি / এনএইচ

আরো পড়ুন

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুঁশিয়ারি ছাত্র-জনতার

দেশী কোচ ও মাশরাফিকে নিয়েই সিলেট স্ট্রাইকারের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন

নিউজ ডেস্ক

সিলেটের টেংরা টিলার মাটির নিচে সম্পদের ভান্ডার