TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ভারতে বসে হাসিনার ইন্ধনে নাশকতার ছক কষছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির প্রধান শেখ হাসিনাসহ অন্য পলাতক নেতারা বাংলাদেশের মানুষকে নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে সবাইকে দেখে নেবেন-এমন হুমকিও দেন। তিনি ভারতে বসে আত্মগোপনে থাকা তার দলের নেতাকর্মীদের ভয়েস কলে নানা নাশকতামূলক অপতৎপরতার নির্দেশনা দেন। তা মোকাবিলায় সরকারের তরফ থেকে নানারকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষ সোচ্চার হয়।

এরই মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল থেকে জুলাই গণহত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশ ও ঢাকার বিশেষ আদালত থেকে রাজউকের প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় প্রথমে ২১ বছরের সাজা হয়, পরে আরও এক মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই যখন বাস্তবতা তখন দেশের মানুষের কাছে ভীতিকর এই দলটি নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে চরম অস্থিতিশীলতা তৈরিসহ নির্বাচন বানচালের সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালাতে পারে।

৩২টি সংসদীয় আসনে ঢুকে যেতে পারে প্রতিবেশী দেশে পলাতক দলটির নেতারা। ওইসব আসনে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে তারা। সীমান্তবর্তী আসনগুলোতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ভারত থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে নির্বাচনে সহিংসতা চালাতে পারে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত ও বাধাগ্রস্ত করতে তারা সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে পারে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের উসকানি ও মদদ দিয়ে তাদের বসতবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করাসহ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাতে পারে। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আওয়ামী চক্রান্তের এমন সব তথ্য। এরই মধ্যে প্রতিবেদনটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগের যে অপতৎপরতার ছক উঠে এসেছে সে বিষয়ে করণীয় জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির সদ্য সাবেক প্রধান ও সুশাসনের জন্য সাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা ঢুকে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে সরকারকে সজাগ হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে অনেক ঝুঁকি থেকে দেশ রক্ষা পাবে।

৫ আগস্ট-পরবর্তী আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান নিয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ বর্তমানে গোপন বৈঠক করছে। এছাড়া অনলাইনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগসহ নানা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি দেওয়াসহ ধর্মীয় অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশে বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে ডিপ ফেক ভিডিও, মিথ্যা ভাষণ বা নকল বার্তা তৈরি করে অসত্য তথ্য প্রচার করতে পারে। গোয়েন্দারা জানান, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ১০টি আসনে চরমপন্থিদের তৎপরতা আছে। পার্বত্য জেলার তিন আসনে রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, স্বার্থান্বেষী মহল ও আওয়ামী লীগ এসব চরমপন্থি গ্রুপ এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে আওয়ামী লীগ।

সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারা সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে নির্বাচনে ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দেশের ভেতরেও তাদের লোক আছে। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করতে পারে। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা নির্বাচন প্রতিরোধের কথা একাধিকবার বলেছেন। এ বিষয়ে করণীয় কী জানতে চাইলে সাবেক এই আইজিপি বলেন, পুলিশ, বিডিআর এবং সেনাবাহিনী তৎপর থাকলে তারা সফল হতে পারবে না বলে আমি মনে করি। সব ধরনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না। এক্ষেত্রে যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে ৫ হাজার ৭৬৩টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪২৩টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখনো উদ্ধার হয়নি এক হাজার ৩৪০টি অস্ত্র। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ধরনের ১০ হাজার ৫০৬টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে ৬৫৭টি অস্ত্র এখনো জমা পড়েনি। ধারণা করা হচ্ছে, এসব অস্ত্রের একটি বড় অংশ সন্ত্রাসী, ডাকাত, ছিনতাইকারী, মাদককারবারি এবং কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চলে গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এসব অস্ত্র ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া এবং থানা ঘেরাওসহ নানা কারণে পুলিশের মধ্যে এখনো ভীতি কাজ করছে। পুলিশের মনোবল দ্রুত চাঙা ও সক্রিয় করা না গেলে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৫ আগস্টের পর যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন পেয়েছে তারা চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে স্বার্থান্বেষী মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।

সূত্রঃ যুগান্তর

এম.কে

আরো পড়ুন

‘মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে, বাড়ছে অনুপ্রবেশ’

‘বাংলাদেশের কাছে ৬০০ একর জমি চায় সৌদি আরব’

এবার সিলেটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক