12.5 C
London
October 22, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ভেঙে ফেলা হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘মিনিস্টার বাড়ি’

ভেঙে ফেলা হচ্ছে সিলেটের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী বাড়ি। এবার হাতুড়ি শাবলের আঘাতে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নগরের পাঠানটুলা এলাকার ‘মিনিস্টার বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি। 

ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় মালিকপক্ষই ঐতিহাসিক এ বাড়িটি ভেঙে ফেলছে বলে জানা গেছে। তবে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ও প্রাচীন এই বাড়িটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আক্ষেপ করেছেন স্থানীয়রা।

আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ এ বাড়িটি নির্মাণ করেন।তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। এরপর ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার কারণেই এই বাড়িটি ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত।

তবে এই বাড়িটি কবে নির্মিত হয়েছিলো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ কেউ বাড়িটির বয়স শতবর্ষ বলে জানিয়েছেন। তবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আব্দুল হামিদ ১৯৬৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে পাঠানটুলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাতুড়ি শাবল দিয়ে পুরনো বাড়িটি ভাঙার কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তারা জানিয়েছেন, বাড়িটি পুরনো হয়ে যাওয়ায় মালিকপক্ষই বাড়িটি ভেঙে ফেলছেন। পুরনো ভবন ভেঙে এখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।

এ ব্যাপারে বাড়ির মালিকপক্ষের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারা দেশের বাইরে থাকেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে এই বাড়িটি বিক্রির জন্য বাড়ির সমানে সাইনবোর্ড টানানো ছিলো। তবে বিক্রি হয়েছে কী না নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির দরজা জানালা ইতোমধ্যে খুলে ফেলা হয়েছে। এখন ছাদ ভাঙার কাজ চলছে।

বাড়ির মালিকপক্ষের বরাত দিয়ে নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, স্থাপনাটি ‘ব্যবহার অনুপযোগী’ হয়ে পড়েছিল। বাড়ির ছাদে ফাটল দেখা দেয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

তবে এনিয়ে হতাশা প্রকাশ করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা-ধরা, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেটে ঐতিহ্যবাহী পুরনো স্থাপনা নেই বললেই চলে। নতুন করে আরেকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলার খর দুঃখজনক।

তিনি বলেন, এটি একটি ব্যক্তিমালানাধীন সম্পদ। তাই আমাদের কিছু করার নেই। তবে মালিকপক্ষ ভবনটি না ভেঙে সংস্কার করে রক্ষার চেষ্টা করতে পারতেন। কারণ এটি কেবল একটি ভবন নয়- এই অঞ্চলের ইতিহাসের সাক্ষী, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীরও একটি উদাহরণ হিসেবে টিকে ছিলো।

তবে বাড়ি ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। রেজাউল করিম আলো নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘শুধু ছাদ ডেমেজ হওয়ার কারণে শতবর্ষী স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। যদিও এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি, কিন্তু এমন একটি শৈল্পিক ইমারত এখন আর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এরকম ঐতিহ্য ধ্বংস করা যতটা সহজ, সৃষ্টি করা তার চেয়ে বহু গুণ কঠিন। ’

জালাল আহমেদ জালাল নামের আরেকজন লিখেন, সিলেট থেকে বাসে সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে এই বাড়িটি দেখতাম। এ বাড়িতে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিশ্রাম নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, আব্দুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন আসামের এমএলএ এবং বৃহত্তর আসামের শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তৎকালীন বিধানসভার স্পিকারও ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারে শিক্ষামন্ত্রী ও বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুল হামিদের বোন হাফিজা বানু ছিলেন আইনজীবি আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের মা এবং বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবুল মোমেনের দাদী।

সূত্রঃ সিলেট টুডে

এম.কে
অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

৭ বছর কোমায় থাকা সেনা কর্মকর্তার বিরল পদোন্নতি

অনলাইন ডেস্ক

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কারোপঃ চ্যালেঞ্জ নাকি সুযোগ বাংলাদেশের জন্য?

নিউজ ডেস্ক

সিটি নির্বাচনের হাল হকিকত