12.5 C
London
October 22, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

মন্টসেরাটের রবার্ট বেকারের মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সরকারের স্বাস্থ্যনীতিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যা

৬৩ বছর বয়সী ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি (BOT) নাগরিক রবার্ট বেকারের মৃত্যু যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জ্যামাইকা ও মন্টসেরাটের দ্বৈত নাগরিক বেকার চিকিৎসা সহায়তা না পেয়ে অবশেষে জ্যামাইকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার পরিবার ও সমর্থকরা যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ টেরিটরির নাগরিকদের জন্য “ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক” স্বাস্থ্যনীতি সংস্কারের দাবি তুলেছেন।

বেকার কয়েক মাস ধরে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন, কিন্তু মন্টসেরাট দ্বীপে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না থাকায় তাকে জ্যামাইকায় পাঠানো হয়। মন্টোগো বে’র এক হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে তিনি বলেন, হাসপাতালটি সংস্কারের আওতায় থাকায় তাকে প্রায় দুই সপ্তাহ চারটি চেয়ার জোড়া লাগিয়ে শুয়ে থাকতে হয়েছে। কখনও তাকে হুইলচেয়ারে ঘুমাতে হয়েছে। “আমার পা নিচে ঝুলে থাকত, ফুলে যেত,”—বলেন তিনি মৃত্যুর আগে এক সাক্ষাৎকারে।

অস্ত্রোপচারের পর বেকারের পেটে টিউমার অপসারণ করা হয়, কিন্তু হাসপাতালের সঙ্কট ও অর্থাভাবের কারণে যথাযথ সেবা পাননি তিনি। তার পরিবার জানায়, ব্যয়বহুল ওষুধ কেনার সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছিল তারা। বেকারের মৃত্যু পরিবারকে শোকে ভাসিয়েছে। তার সঙ্গিনী সিনথিয়া ব্রুকস বলেন, “আমরা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। তবু আমাদের মানুষ এমনভাবে মারা যাচ্ছে। যদি সরকার রবার্টের আর্তি শুনত, সে আজ বেঁচে থাকত।”

মন্টসেরাটের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ডোনাল্ডসন রোমিও বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর (FCDO)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি চিঠি, তহবিল সংগ্রহ ও নিজে যুক্তরাজ্য সফরের মাধ্যমে বেকারের চিকিৎসার জন্য সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে জানানো হয়—দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সাধারণত কনসুলার সহায়তা দেয় না, যদি না মানবাধিকার বা মানবিক সংকটের প্রশ্ন ওঠে।

রোমিও বলেন, বর্তমান নীতিমালা “ত্রুটিপূর্ণ, বিচ্ছিন্ন ও অমানবিক”। তার বক্তব্যে উঠে আসে এক গভীর প্রশ্ন—“একজন অস্ত্রোপচারের পর রোগী যদি আট সপ্তাহ ধরে ইনট্রাভেনাস খাবার খেয়ে, চেয়ার বা হুইলচেয়ারে ঘুমিয়ে থাকে—তাহলে কি সেটি মানবিক? যুক্তরাজ্যের কারাগারেও এমন অবস্থা সহ্য করা হতো?”

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক যত্ন বিভাগ জানিয়েছে, প্রতি বছর ওভারসিজ টেরিটরি থেকে ৫ থেকে ১০ জন নাগরিককে এনএইচএস চিকিৎসা দেওয়ার সীমিত সুযোগ রয়েছে। তবে ব্যয়, যাতায়াত ও আবাসনের খরচ নিজ নিজ টেরিটরি সরকারকে বহন করতে হয়। রোমিও বলেন, “এই নীতিটি গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ। এটি অসমতা তৈরি করছে, যার ফল হচ্ছে মৃত্যুর মতো করুণ পরিণতি।”

১৯৯৫ সালের আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের পর মন্টসেরাটের রাজধানী প্লাইমাউথ ধ্বংস হয়, এবং এখনও দ্বীপটির পর্যাপ্ত হাসপাতাল বা বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা পুনর্গঠিত হয়নি। ফলে নাগরিকদের অনেকেই বাধ্য হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু ব্যয়ভার ও প্রশাসনিক জটিলতা অনেক সময় হয়ে দাঁড়ায় প্রাণঘাতী বাধা।

রোমিও বলেন, “ধনী টেরিটরিগুলো যেমন জিব্রালটার বা ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সিগুলোর নাগরিকরা সহজেই এনএইচএস সুবিধা পান, কিন্তু মন্টসেরাটের নাগরিকরা এখনও বৈষম্যের শিকার। আমরা ব্রিটিশ নাগরিক, আমাদেরও সমান মর্যাদা ও সেবার অধিকার থাকা উচিত।”

এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে নীতিমালা সংস্কারের দাবি উঠছে। মন্টসেরাটের প্রতিনিধিরা আশা করছেন, রবার্ট বেকারের মৃত্যু বৃথা যাবে না—বরং এটি ওভারসিজ টেরিটরির নাগরিকদের জন্য ন্যায্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আন্দোলনকে আরও জোরদার করবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ব্রিটেনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, চীনা দম্পতি গ্রেফতার

নিউজ ডেস্ক

পশ্চিমা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে টার্গেট করেছে রুশ হ্যাকাররাঃ যুক্তরাজ্য

আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে ইমিগ্রেশন ওয়াচডগের অসন্তোষ