10.5 C
London
February 24, 2025
TV3 BANGLA
Uncategorizedসারাদেশ

‘মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০ হাজার টাকা করা হবে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা মুক্তিযোদ্ধারা তার সরকারের সময় অবহেলায় থাকতে পারে না।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে, আমি মনে করি, এই সময় ১২ হাজার টাকা কিছুই নয়। একে আমরা ২০ হাজার টাকা করে দেব। খবর: বাসস

 

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম (এমআইএস)-এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ‘জিটুপি’ পদ্ধতিতে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের অ্যাকাউন্টে সম্মানি ভাতা প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন কালে সাংবাদিকদের একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

 

এর ফলে এখন থেকে প্রতিমাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্মানি ভাতা পাবেন।

 

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানস্থল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের এখন আর কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, কারো কাছে ধর্ণা দিতে হবে না, এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফর্শেন সিস্টেম)-এর ভিত্তিতে টাকাটা সরাসরি যার প্রাপ্য তার হাতে পৌঁছে যাবে। সরকার থেকে জনগণ অর্থাৎ জিটুপি’র মাধ্যমে সরাসরি টাকা পৌঁছে যাবে।

 

এদিনই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টিবোর্ডের সভার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের মিটিং ছিল সেখানে এতগুলো ভাগ না করে আমরা বলেছি নিচের যে কয়টা শ্লট আছে সেগুলো এক জায়গায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২০ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করবো। অর্থাৎ বীরশ্রেষ্ট এবং বীর উত্তম ছাড়া বাকী যারা আছেন আমি মনে করি, সবাইকে একসাথে করে দেওয়াটাই ভালো। কারণ, সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।

 

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি করে দেয়ার জন্য মুজিবর্ষ এবং আসন্ন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সরকারের গৃহীত কর্মসূচির আওতায় দেশের সব গৃহহীনকে ঘরে দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার গৃহ নির্মাণেরও ঘোষণা দেন।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কোন গৃহ থাকবে না, তারা ঠিকানা বিহীন ভাবে কষ্ট করে থাকবেন। এটা আমি যতদিন সরকারে আছি তা অন্তত হতে পারে না।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যেকের থাকার মত আবাসন এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি এবং রাষ্ট্রীয় সম্মান দিচ্ছি এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে সবধরনের পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি, বলেন তিনি।

 

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

 

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত হয়।

 

অনুষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈর, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, খুলনার পাইকগাছা এবং চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা সংযুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী পরে এসব স্থানের উপকারভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী তার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আরো বলেন, শহিদ পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা, মৃত যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা, ৭ বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীর উত্তম খেতাবধারীগণ মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রম খেতাবধারীগণ মাসিক ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীক খেতাবধারীগণ মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।

 

তিনি বলেন, এত ভাগ ভাগ না করে সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে এবং বীরবিক্রম, বীর প্রতীকসহ সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা সবাই ২০ হাজার টাকা করে পাবেন।

 

তবে, বর্তমানে ১২ হাজার টাকা হারেই ভাতা আপাদত ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধারা পাবেন বলেও তিনি জানান।

 

শেখ হাসিনা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবার, নির্যাতিতা নারী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের কাজ জাতির পিতাই প্রথম যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশ পুণর্গঠনকালে শুরু করে যান। কিন্তু, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিস্মাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত হয় স্বাধীনতাবিরোধী শাসকগোষ্ঠী।

 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্য ১৯৭২ সালে গঠন করেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। তিনি পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া ৩২টি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এই ট্রাস্টের অধীনে ও ন্যস্ত করেছিলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে স্বাবলম্বী করার জন্য ‘কল্যাণ ট্রাস্ট উদ্ধার পরিকল্পনা’ নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

 

মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সরকারি চাকুরি হতে অবসর গ্রহণের সময়সীমা বৃদ্ধি করে ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তযুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদেরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

 

এ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৪৯ জন ব্যক্তি ও ১০টি সংগঠনকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ পদক প্রদান করা হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তার সরকার সকল জেলায় ৩ তলা বিশিষ্ট প্রায় ১ শত ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং দেশের ৪৭০টি উপজেলায় ৩ তলা বিশিষ্ট ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজও চলমান রেখেছে, যার অনেকগুলো ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে।

 

সরকার প্রধান বলেন, উপজেলা মুক্তযুদ্ধ কমপ্লেক্সগুলোতে একটি ছোট জাদুঘরের মত থাকবে যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিগুলো সংরক্ষিত থাকবে।

 

তিনি বলেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছেন তারা নবীন প্রজন্মের জন্য ঐ গল্পটা রেখে যাবেন, কে কোথায় কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন। তাদের ছবিসহ স্মৃতিচিহ্ন সেখানে সংরক্ষিত থাকবে। কারণ, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। সেই বিজয়ের স্মৃতি ভুলে যাবার নয়।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহিদ ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে প্রায় ৪ শত ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে।

 

আর সরকারের যা যা করণীয় তা তিনি করে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মুজিবর্ষ উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আগামী মাসে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিবর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’।

 

তিনি বলেন, ৯ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। তেমনিভাবে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রায় ৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ৩০ হাজার আবাসন ‘বীরনিবাস’ নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

 

সরকার প্রধান বলেন, আশা করছি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছরেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীরনিবাস’ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২ হাজার ৯৬২টি ‘বীরনিবাস’ নির্মাণ করে গৃহহীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা ইতোধ্যেই করা হয়েছে।

 

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
নিউজ ডেস্ক

আরো পড়ুন

যেভাবে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলেন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক

অনলাইন ডেস্ক

UK Immigration update Coronavirus COVID-19

ইউরোপের মানবপাচার চক্রের প্রধান সমন্বয়ক ‘ইউরো আশিক’সহ গ্রেফতার ৭

অনলাইন ডেস্ক