প্যানিক অ্যাটাকে ‘অসুস্থ’ সাংবাদিক মুন্নী সাহাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ।
শনিবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে পড়েন এ নারী সাংবাদিক। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখানে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ডিবি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে প্যানিক অ্যাটাকে অসুস্থ হয়ে পড়াসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় ৪৯৭ ধারায় পরিবারের জিম্মায় মুন্নী সাহাকে ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ। এজন্য চার মামলায় আত্মসমর্পণ করে আদালত থেকে জামিন নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। সেসব মামলায় তাকে আত্মসমর্পণ করে কোর্ট থেকে জামিন নিতে হবে। যেহেতু তিনি প্যানিক অ্যাটকের শিকার এবং নারী সাংবাদিক। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাকে ছাড়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামিন নেওয়ার শর্তে ৪৯৭ ধারায় পরিবারের জিম্মায় গ্রেপ্তার মুন্নী সাহাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান বলেন, কারওয়ান বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে পড়ার পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়।
ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো ছেড়ে দেওয়া হয়নি, তবে প্রক্রিয়া চলছে। যে থানায় মামলা রয়েছে সে থানার ওসি আসবে, যে থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়েছিল তারাও আসবে। এরপর পরিবারের জিম্মায় কাগজে-কলমে আইনানুসারে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
যদিও পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় সাংবাদিক মুন্নী সাহাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন।
জানা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘এক টাকার খবরে’র অফিস থেকে বের হয়ে সবজি কিনতে যান মুন্নী সাহা। সেখানে গিয়ে তিনি জনতার তোপের মুখে পড়েন। বেশকিছুক্ষণ তাকে ঘিরে রাখা হয়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারের সামনে সবজি কিনছিলেন মুন্নী সাহা। এ সময় তাকে চিনতে পেরে একদল লোক বিক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর চড়াও হন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় তেজগাঁও থানা পুলিশ। পরে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ওই মামলা দায়ের করেন নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. কামরুল ইসলাম। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়। পাশাপাশি সাতজন সাংবাদিককেও এ মামলায় আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে একজন মুন্নী সাহা।
টেলিভিশন সাংবাদিক ও টকশো সঞ্চালক হিসেবে পরিচিত মুখ মুন্নী সাহার সাংবাদিকতা শুরু আজকের কাগজ দিয়ে। সেখান থেকে ভোরের কাগজে দীর্ঘসময় কাজ করার পর তিনি যান একুশে টেলিভিশনে। এরপর যোগ দেন এটিএন বাংলায়।
এটিএন নিউজের শুরু থেকে মুন্নী সাহা এই টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে ২০২৩ সালের ৩১ মে তিনি এটিএন নিউজ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ‘এক টাকার খবর’ নামের নতুন একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
এদিকে, সাংবাদিক মুন্নী সাহার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে গত ৬ অক্টোবর ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে বলা হয়, আপনাদের ব্যাংকে মুন্নী সাহা এবং তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো আমানত, ঋণ, লকার, ক্রেডিট কার্ড, ফরেন ট্রেড, অফশোর ব্যাংকিং হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেনের তথ্য ৭ অক্টোবরের মধ্যে বিএফআইইউকে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া হিসাব খোলার ফরম, টিপি, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী ও অন্যান্য দলিলাদির তথ্যও বিএফআইইউকে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে।
এম.কে
৩০ নভেম্বর ২০২৪